E-Paper

মারা গেলেন শিম্পাঞ্জিদের ‘বন্ধু’ জেন, রেখে গেলেন পৃথিবীকে বাঁচানোর স্বপ্ন

জেনের জন্ম ১৯৩৪-এর ৩ এপ্রিল, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে। কিশোরীবেলাতেই মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বোর্নমাউথে। সেখানেই কেটেছে আজীবন। তবে বছরের ৩০০ দিন কাটাতেন পৃথিবী পরিক্রমা করে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৩০
প্রয়াত জেন মরিস গুডঅল।

প্রয়াত জেন মরিস গুডঅল। ছবি: পিটিআই।

‘মানুষ মেধাবী হতে পারে, কিন্তু বুদ্ধিমান নয়। বুদ্ধিমান হলে এ ভাবে নিজের বাসস্থানকে ধ্বংস করে ফেলত না।’

এই উক্তি যে নৃতত্ত্ববিদের, প্রয়াত হলেন সেই জেন মরিস গুডঅল।৯১ বছর বয়স হলেও প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছিলেন, গিয়েছিলেন আমেরিকায়, বক্তৃতা দিতে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ঘুমের মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে মারা যান।

জেনের জন্ম ১৯৩৪-এর ৩ এপ্রিল, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে। কিশোরীবেলাতেই মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বোর্নমাউথে। সেখানেই কেটেছে আজীবন। তবে বছরের ৩০০ দিন কাটাতেন পৃথিবী পরিক্রমা করে। বিভিন্ন দেশের মানুষকে শোনাতেন তাঁর কাজের কথা। বোঝাতেন, কী ভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের খাদ থেকে ফিরিয়ে আনা যায়। নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি, বারবার তুলতেন সেই প্রশ্ন। ছিলেন ভয়ঙ্কর আশাবাদী। বলতেন, “আমি জানি, পুতিন-বোলসোনারোদের হারিয়ে এক দিন জিতে যাবে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছে।”

১৪ মাসের ‘পোলা’কে কোলে নিয়ে জেন গুডঅল।

১৪ মাসের ‘পোলা’কে কোলে নিয়ে জেন গুডঅল। ছবি: পিটিআই।

জেনের প্রধান পরিচিতি ‘শিম্পাঞ্জি-বান্ধব’ হিসেবে। তানজ়ানিয়ার গম্বে স্ট্রিম জাতীয় অভয়ারণ্যে ছ’দশকের বেশি কাটিয়েছেন জেন। প্রথম যখন পা রাখেন আফ্রিকার এই জঙ্গলে, জীবাশ্মবিদ লুই লিকি-র সেক্রেটারি হিসেবে, তখন শিম্পাঞ্জিরা কোনও মানুষের ধারে-কাছে ঘেঁষত না। দূরবিন দিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করে গবেষণার কাজ চালাতেন বিজ্ঞানীরা। দূরবিনকে সঙ্গী করেই শিম্পাঞ্জিদের হাবভাব পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন জেন। কিছু দিনের মধ্যেই তাদের ‘মানুষের মতো’ কার্যকলাপ নজরে আসে। জেন দেখেন, দু’টি শিম্পাঞ্জি একটি গাছের সরু ডাল ভেঙে, পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে, ডালটা বাঁকিয়ে ভেঙে একটি উইয়ের ঢিবি খুঁচিয়ে তার ভিতর থেকে উই বার করে মুখে ফেলছে। বেশ কিছু দিন ধরে শিম্পাঞ্জিদের এই কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে জেন এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছন যে, উন্নত মেধার পশুরা যে শুধু কোনও বস্তুকে নিজেদের কাজের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, তা-ই নয়, তারা প্রয়োজনে সেই সামগ্রী তৈরিও করে নিতে পারে। জেনের সেই পর্যবেক্ষণের পরে লুইস লিকি তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছিলেন, ‘আমাদের এ বার কোনও একটির ধারণা পাল্টাতে হবে— ‘মানুষ’ বা তার ‘ব্যবহার্য সামগ্রী’। তার থেকে বরং আমরা ‘শিম্পাঞ্জি’-বিষয়ক ধারণাটাই পাল্টে ফেলি!’

দু’পেয়ে পশুদের নিয়ে ১৯৬০-এর দশকে এক তরুণী গবেষকের এই ‘তত্ত্ব’ তৎক্ষণাৎ সাড়া ফেলে দেয়। তার পরে দশকের পর দশক শিম্পাঞ্জি-পর্যবেক্ষণের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। যার ফসল ‘ইন দ্য শ্যাডো অব হোপ, ‘দ্য শিম্পাঞ্জি’র মতো প্রামাণ্য সব বই।

জেনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বার্তা এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়ামের কথায়, “প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাটাই পাল্টে দিয়েছেন জেন গুডঅল।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chimpanzee Death Los Angeles

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy