Advertisement
E-Paper

দিল্লিকে ‘বন্ধুত্বের হাত’, মোষের মাংস কেনার প্রস্তাব বেজিংয়ের

গোমাতাকে নিয়ে স্পর্শকাতর হলেও, মহিষ-মাংসের রফতানিতে এ বার নতুন দিগন্ত ছুঁতে চায় মোদী সরকার। দীর্ঘদিনের প্রয়াসের পরে এ ব্যাপারে চিনের প্রাচীর টপকাতে চলেছে ভারতীয় মোষের মাংস।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৩

গোমাতাকে নিয়ে স্পর্শকাতর হলেও, মহিষ-মাংসের রফতানিতে এ বার নতুন দিগন্ত ছুঁতে চায় মোদী সরকার। দীর্ঘদিনের প্রয়াসের পরে এ ব্যাপারে চিনের প্রাচীর টপকাতে চলেছে ভারতীয় মোষের মাংস। এত দিন ভারতের সরাসরি রফতানির উপর বেজিংয়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন। ফলে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নয়াদিল্লির ঘাটতি এক ধাক্কায় অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দ্বিপাক্ষিক তিক্ততার মধ্যেই চিন দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং সহযোগিতার প্রশ্নে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে। চিনা রাষ্ট্রদূত লাও ঝোউহুই আজ নয়াদিল্লিতে বলেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে সমস্ত বকেয়া চুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ফের খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানও আমাদের লক্ষ্য।’’ রাষ্ট্রদূতের এই ঘোষণার ঠিক পরেই মোষের মাংস নিয়ে ঘোষণা তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে চিনের এই ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়ানোর পিছনে ঠিক কী কারণ রয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখছে মোদী প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ভারতে আরও বেশি করে চিনা পণ্য বাজারজাত করার অভিসন্ধি বেজিংয়ের রয়েছে কি না, সে দিকটিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

গত আর্থিক বছরে (২০১৫-১৬) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতি ছিল ৫২৬৯ কোটি মার্কিন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রকের আশা, এ বার সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও কমানো যাবে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘মহিষের মাংস চিনে সরাসরি রফতানির জন্য আমরা কিছু দিন ধরে লড়ছিলাম। এত দিন চিনের ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনামের কাছ থেকে মোষের মাংস কিনত। কিন্তু মজার ব্যাপার, ভিয়েতনাম থেকে যে মাংস নিত চিন, সেটা ভারতেরই! ভিয়েতনামেই ভারত সব চেয়ে বেশি মোষের মাংস রফতানি করে।’’

গদিতে বসার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চেষ্টা করে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে চিনের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের পথ খুলতে। এ নিয়ে চিনের সঙ্গে চুক্তিপত্রও সই হয়েছিল। ২০১৫ সালের মে মাসে মোদীর চিন সফরের সময় বেজিং জানিয়েছিল, শীঘ্রই এই চুক্তি বাস্তবায়িত করার জন্য তারা ‘কোয়ালিটি ইনস্পেক্টর’ পাঠাবে। কিন্তু তারপরে বেজিং আর বিষয়টি নিয়ে এগোয়নি। সম্প্রতি ভারতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠায় তারা। আপাতত ১৫টি কেন্দ্র থেকে রফতানির অনুমোদন দিয়েছেন চিনা বিশেষজ্ঞরা। এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে বলে আশা বাণিজ্য মন্ত্রকের। তবে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ১৫ বছর ধরে ভারতের সামনে এই নিষেধাজ্ঞা ঝুলিয়ে রাখার সঙ্গে ভারতীয় মোষের মাংসের গুণগত মানের সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে চিন সরকারের সন্দেহ ছিল না। বিষয়টি রাজনৈতিক। গুণগতমান নিয়ে যদি চিনের সংশয় থাকত, তা হলে এত দিন সেই মাংস ঘুরপথে ভিয়েতনামের থেকে তারা নিত না। শুধু ভিয়েতনামই নয়, মালয়েশিয়া, মিশর, ইরাক, সৌদি আরবেও হই হই করে ভারতীয় মোষের মাংস বিক্রি হয়। নেহাতই ভারতকে চাপে রাখতে এত দিন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।

বেজিংয়ের ব্যাপারে ভারতের বাড়তি আগ্রহের কারণ, চিনে মাংসাশীর সংখ্যা বাড়ছে। সমীক্ষা বলছে, ১৯৭৮-এ এক চিনা নাগরিক গড়ে ৩০ গ্রাম মাংস খেতেন না। চার দশকে তা বেড়ে হয়েছে ১৮০ গ্রাম। সমীক্ষকেরা বলেন, ২০৩০-এ বিশ্বের পাকস্থলীতে যাওয়া গরু-মহিষের অর্ধেক পরিমাণ যাবে চিনের পেটেই!

China India Buffalo meat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy