Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Tianwen-1

লালগ্রহের পথে পাড়ি দিল চিনের ‘সত্যান্বেষী’

জুলাইয়ের শেষার্ধে এখন লালগ্রহের পথে ভালই ভিড়। এই সপ্তাহে এ নিয়ে দ্বিতীয় মহাকাশযান রওনা দিল পড়শি গ্রহটির উদ্দেশে।

তিয়ানওয়েন-১-কে নিয়ে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে লং মার্চ-৫ রকেট। বৃহস্পতিবার চিনের হাইনানে। এপি

তিয়ানওয়েন-১-কে নিয়ে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে লং মার্চ-৫ রকেট। বৃহস্পতিবার চিনের হাইনানে। এপি

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

তিয়ানওয়েন, বাংলায় যার অর্থ ‘স্বর্গীয় সত্যের সন্ধানে’। সেই অজানার খোঁজে আজ দশ কোটি কিলোমিটার দূরে লালগ্রহের উদ্দেশে পাড়ি দিল চিনের মঙ্গলযান ‘তিয়ানওয়েন-১’। যানের একটি অংশ (অরবিটার) মঙ্গলের কক্ষপথে পাক খাবে। দ্বিতীয় অংশটি (রোভার) নামবে লালমাটিতে। অবতরণে সফল হলে আমেরিকার পরে তারাই প্রথম জয় করবে মঙ্গল।

জুলাইয়ের শেষার্ধে এখন লালগ্রহের পথে ভালই ভিড়। এই সপ্তাহে এ নিয়ে দ্বিতীয় মহাকাশযান রওনা দিল পড়শি গ্রহটির উদ্দেশে। গত সোমবার জাপান থেকে পাড়ি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির যান ‘আমাল’। এটি শুধুই অরবিটার। মঙ্গলের মাটিতে নামবে না। আগামী সপ্তাহে আবার ফ্লরিডার কেপ ক্যানাভ্যারাল থেকে নাসা-র অতি আধুনিক রোভার পাড়ি দেবে মঙ্গলের উদ্দেশে।

চিনের দক্ষিণ উপকূল বরাবর অবস্থিত হায়নান দ্বীপ থেকে ‘লং মার্চ-৫’ রকেটে চেপে আজ পাড়ি জমায় ‘তিয়ানওয়েন-১’। অভিযানের সাক্ষী থাকতে নিকটবর্তী সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশো উৎসাহী। ঝকঝকে নীল আকাশ ঢেকে যায় আগুনরঙে। সব ঠিক থাকলে তিয়ানওয়েন-১-এর মঙ্গলে পৌঁছতে সময় লাগবে ৭ মাস। লালগ্রহের মাটির নীচে জলের অনুসন্ধান করবে তার সত্যান্বেষী রোভার। সেই সঙ্গে এ-ও খুঁজে দেখবে, আগে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না এ গ্রহে।

এটাই চিনের প্রথম মঙ্গল অভিযান নয়। ২০১১ সালে রুশ রকেটে চেপে পাড়ি দিয়েছিল তাদের একটি অরবিটার। কাজাখস্তান থেকে রওনা দেয়। কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ছেড়ে বেরনোর সময়ে দিগ্‌ভ্রষ্ট হয় রাশিয়ার মহাকাশযান। শেষে বায়ুমণ্ডলেই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়। এ বারে আর অন্য কোনও দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান করছে না চিন। রকেটও তাদের নিজেদের তৈরি। গত কয়েক দশকে মহাকাশ বিজ্ঞানে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে চিন। ২০০৩ সালে প্রথম মহাকাশে যান চিনের নভশ্চর ইয়াং লিওয়েই। গত বছর চাঁদের দূরতম প্রান্তে অবতরণ করে তাদের চন্দ্রযান চ্যাং’ই-৪। এই কৃতিত্ব রয়েছে শুধু চিনেরই। মঙ্গলজয় করে ফেললে এলিট ক্লাবে নিজের এক রকম পাকাপোক্ত জায়গা করে ফেলবে চিন। চিনা এরোস্পেস প্রোগ্রামের বিশেষজ্ঞ ডিন চেং বলেন, ‘‘এই অভিযানের উপরে অনেক প্রত্যাশা, সম্মান জড়িয়ে রয়েছে।’’

মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ বেশ জটিল। একমাত্র আমেরিকাই সফল হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আট বার সফল হয়েছে তারা। নাসার ‘ইনসাইট’ ও ‘কিউরিয়োসিটি’ এখনও সন্ধানকাজ চালাচ্ছে মঙ্গলে। অন্য আরও ছ’টি যান মঙ্গলের কক্ষপথে পাক খাচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি আমেরিকার, দু’টি ইউরোপের ও একটি ভারতের।

নিজেদের মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে বেশ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে চিন। এ মাসে ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ পত্রিকায় তিয়ানওয়েন-১ অভিযান নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তা থেকে যা জানা গিয়েছে— অভিযানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওয়ান ওয়েক্সিংয়ের হিসেব সত্যি হলে, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করবে তিয়ানওয়েন-১। তার পর এপ্রিল কিংবা মে মাসে মঙ্গলের ‘ইউটোপিয়া প্ল্যানেশিয়া’ অঞ্চলে অবতরণ করবে রোভার। এই অঞ্চলে মাটির নীচে বরফ থাকতে পারে বলে চিহ্নিত করেছিল নাসা। সেই জন্যই জায়গাটিকে বেছে নেওয়া। সৌরশক্তি চালিত ২৪০ কেজির গল্ফ গাড়ি মাপের রোভারটি তিন মাস কাজ করবে।

এ বছরের গোড়ার দিকেই এই অভিযানের পরিকল্পনা ছিল চিনের। প্রথমে রকেটে সমস্যা হয়। তার পরে করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরা। গবেষণার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে থমকে যায় ‘তিয়ানওয়েন-১’ অভিযান। মার্চে এক বার কিছু যন্ত্রাংশ বেজিং থেকে শাংহাইয়ে পাঠানোর কথা ছিল। এ দিকে চিন তখনও ‘তালাবন্ধ’। শেষে তিন বিজ্ঞানী টানা ১২ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে যন্ত্রাংশ পৌঁছে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tianwen-1 China Mars
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE