তাইওয়ান প্রণালীতে চক্কর কাটছে অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার যুদ্ধজাহাজ। এই খবর পেয়েই ওই দু’টি যুদ্ধজাহাজকে পিছু ধাওয়া করল চিনের সেনাবাহিনী। বেজিঙের বক্তব্য, ওই দু’টি দেশ তাইওয়ান প্রণালী এবং সংলগ্ন এলাকার স্থিতাবস্থাকে নষ্ট করছে এবং অশান্তিতে প্ররোচনা দিচ্ছে। কানাডার যদিও পাল্টা বক্তব্য, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তির বার্তা দিতেই তাদের এই পদক্ষেপ।
চিন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। কখনওই তাইওয়ানের ‘স্বাধীনতা’ স্বীকার করেনি চিনের কমিউনিস্ট সরকার। তবে ‘স্বাধীন’ তাইওয়ানকে সামনে রেখে বহু বার চিনের উপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি। এই আবহে কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধজাহাজের তাইওয়ান প্রণালীতে ঢোকার ঘটনাকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রসঙ্গত, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য কমাতে তৈরি হওয়া চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’-এর অন্যতম সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া।
কানাডার ‘ফ্রিগেট ভিল ডি কুইবেক’ এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ‘ব্রিসবেন’ শনিবার সকালে ১৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ তাইওয়ান প্রণালীর একাংশ অতিক্রম করেছে। এই প্রণালী চিনা ভূখণ্ড থেকে দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে পৃথক করেছে। এই ঘটনার পরেই চিনের সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া এই কাজ করে ভুল বার্তা দিল। এর ফলে নিরাপত্তাগত ঝুঁকিও বাড়ল।” কানাডা এই বিষয়ে মুখ খুললেও অস্ট্রেলিয়ার তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা দফতর জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং নিরাপত্তা রক্ষায় বায়ু এবং নৌ সেনাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে মাও জে দঙের নেতৃত্বে চিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সরকার। ওই সময়ে গৃহযুদ্ধে পরাজিত জাতীয়তাবাদী কুয়োমিনতাং দলের নেতা চিয়াং কাই শেক তাঁর অবশিষ্ট বাহিনী এবং অনুগামীদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের ফরমোসা দ্বীপপুঞ্জে। বর্তমানে যা তাইওয়ান নামে পরিচিত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করে ফরমোসাকে একটি পৃথক দেশ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন চিয়াং। সরকারি ভাবে তার নামকরণ করা হয় ‘রিপাবলিক অফ চায়না’ বা আরওসি। কিন্তু চিন কখনওই তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
২০২২ সালের অগস্টে চিনের আপত্তি খারিজ করে আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় ওই এলাকায়। সে সময় থেকেই ধারাবাহিক ভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করে চিনা যুদ্ধবিমান। চিন-তাইওয়ান সঙ্কটের আবহে সে সময় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীতে ঢুকেছিল। পরে তারা সরে গেলেও গত তিন বছর ধরে চিনা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ ধারাবাহিক ভাবে আকাশ এবং জলসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তাইওয়ানের। এর পর সাময়িক ভাবে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্দেশ্যে দু’পক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও গত বছর তাইওয়ানের সাধারণ নির্বাচনে কট্টর চিন-বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)-র জয়ের পর নতুন করে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে।