Advertisement
E-Paper

পাছে ট্রিটমেন্ট সেন্টারে যেতে হয়, মাকে চেয়ারে বেঁধে রেখে মারল মেয়ে!

মাকে এক সপ্তাহ ধরে চেন দিয়ে চেয়ারে বেঁধে রেখে, না খাইয়ে মারল এক চিনা কিশোরী। যাতে মা ওই কিশোরীকে মানসিক রোগ সারানোর শিবিরে না পাঠাতে পারেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:০৪

মাকে এক সপ্তাহ ধরে চেন দিয়ে চেয়ারে বেঁধে রেখে, না খাইয়ে মারল এক চিনা কিশোরী। যাতে মা ওই কিশোরীকে মানসিক রোগ সারানোর শিবিরে না পাঠাতে পারেন। ওই শিবিরে গেলেই যে প্রচণ্ড মারধর খেতে হবে! সহ্য করতে হবে নানা রকমের নির্যাতন। এ বার না খাইয়ে মাকে মেরেছে ১৬ বছর বয়সের ওই চিনা কিশোরী। আগের বার মানসিক রোগ সারানোর শিবিরে যাবে না বলে বাবার পিঠে ছুরি বসিয়ে দিয়েছিল সে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল।

উত্তর চিনের হেইলিয়াংজং প্রদেশের ঘটনা। চিনা সংবাদ মাধ্যম শুক্রবার এই খবর দিয়ে জানাচ্ছে, লেখাপড়া শিকেয় তুলে ওই কিশোরী সব সময় পড়ে থাকত ইন্টারনেট নিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরে থাকত কম্পিউটারের সামনে, নেট-সার্ফিং চালিয়ে যেত, নাওয়া-খাওয়া ভুলে। এর ফলে স্কুলের পরীক্ষায় সে ফেল করেছিল কয়েক বার। ক্লাসে ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছিল। তখনই চিন্তায় পড়ে যান ওই কিশোরীর মা, বাবা। তাঁরা তাঁদের এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেন। কী ভাবে মেয়েকে ওই ‘নেশা’ থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়, ওই আত্মীয়ের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করেন কিশোরীটির মা, বাবা। ওই আত্মীয় তাঁদের পরামর্শ দেন, মেয়েটিকে ‘ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ট্রিটমেন্ট সেন্টারে’ পাঠাতে। তাঁরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, গত ২০ বছরে ওই ট্রিটমেন্ট সেন্টার অন্তত হাজার সাতেক মানসিক রোগী শিশুকে সুস্থ করে তুলে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে। সেই শুনে কিশোরীটিকে চিনের এমনই একটি সেন্টারে পাঠিয়ে দেন তাঁর মা, বাবা। সেটা গত ফেব্রুয়ারির ঘটনা। কিশোরীটিকে ট্রিটমেন্ট সেন্টারে পাঠানোর জন্য সে বার বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল তার মা, বাবাকে। কিশোরীটি কিছুতেই যেতে চাইছিল না। দু’টো ষণ্ডা মার্কা লোক এসে কিশোরীটিকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল অনেকটা দূরের শাংডং প্রদেশের একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টারে। কিন্তু চার মাস পরেই সেখান থেকে বাড়িতে পালিয়ে এসেছিল ওই কিশোরী। ফিরে এসে মা, বাবাকে বলেছিল, ওখানে খুব পেটায়। ভাল করে খেতে দেয় না। খুব খারাপ ব্যবহার করে। তার পর চিনের একটি অনলাইন জার্নালে সে সবিস্তারে জানিয়েছিল, তার ওপর ওই ট্রিটমেন্ট সেন্টারে ৪ মাস ধরে কতটা নির্যাতন চালানো হয়েছিল। কী ভয়ঙ্কর ভাবে তাকে পেটানো হয়েছিল। একটা খাটা পায়খানার মতো জায়গায় নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরী আর তার সতীর্থদের কী ভাবে দুপুরের খাবার খেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

ওই কিশোরী ২৫ অগস্ট ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমাকে ওরা যে কী প্রচণ্ড পেটাত, বলে বোঝাতে পারব না। আত্মীয়দের বললে, ওঁরা বলতেন, বাড়িতে মারধর খাসনি? ও একটু-আধটু হয়। মানিয়ে নে। সব কিছু ভুলে যা। কিন্তু ওরা এমন ব্যবহার করত, কোনও মানুষ তেমন ব্যবহার পশুদের সঙ্গেও করে না। ওরা দুমদাম ঘুষি মারত নাকে, গালে, মুখে। শরীরের যেখানে সেখানে মারত। নির্দয় ভাবে। আমার জায়গায় থাকলে, তোমরা কী করতে? যেন মিলিটারি ক্যাম্প। সবাইকে ওরা বুটের ডগায় রাখতে ভালবাসে। হাত দিয়ে পায়খানা সাফ করতে বলত। সেখানেই খেতে দিত। সেখানেই খেতে বলত। তাই আমি এখন প্রচুর অর্থ চাই। ওই অর্থ হাতে পেলেই আমি বক্সিং আর মার্শাল আর্টস শিখব। আর ওই সব দিয়ে ওদের প্রাণে না মারলেও মেরে একেবারে পঙ্গু করে দেব। তোমরা কি জান, আমার মা আমাকে আবার ওই ট্রিটমেন্ট সেন্টারে পাঠাতে চাইছে।’’

চিনা সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ওই অর্থ জোগাড় করতেই মাকে এক সপ্তাহ ধরে চেয়ারে বেঁধে রেখে, না খেতে দিয়ে কিশোরীটি তার নিকটাত্মীয়দের ব্ল্যাক মেল করে যাচ্ছিল। বলছিল, ‘‘যত ইউয়ান চেয়েছি, ততটা আমাকে দিয়ে দাও। তা হলেই মাকে ছেড়ে দেব। মাকে খেতে দেব।’’ শেষ পর্যন্ত কিশোরীর হাতে তুলেও দেওয়া হয় প্রচুর ইউয়ান। প্রচুর অর্থ। যাতে সে তার মাকে রেহাই দেয়। কিন্তু তত ক্ষণে মায়ের শরীর ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে খবর দেয় ওই কিশোরীই। কিন্তু ডাক্তার এসে পৌঁছনোর আগেই কিশোরীটির মা মারা যান।

চিনা সংবাদ মাধ্যম এও জানাচ্ছে, গোটা চিনেই বেশির ভাগ ট্রিটমেন্ট সেন্টারে কিশোর-কিশোরীদের ওপর চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার। তাদের নিগ্রহ করা হচ্ছে। বর্বরোচিত ভাবে। তাদের বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি স্তরে তদন্তও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন- ওয়াইন-গাড়ি-ছুরির নেশায় মত্ত ব্র্যাঞ্জেলিনার দস্যিরাও

Chinese Teen Starves Mother To Death, At Brutal Internet Addiction Boot Camp China
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy