বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণ করা হবে বলে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। যদিও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা ওই এলাকা ঘুরে জানিয়েছেন, সেখানে কোনও মসজিদ নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
ঘটনার সূত্রপাত একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। গত ১৫ অগস্ট এম এম সাইফুল ইসলাম নামে ঢাকার এক ব্যবসায়ী চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওই দিন তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘৯৩ শতাংশ মুসলমানের দেশে সীতাকুণ্ড চন্দ্রিমা পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির আছে, মসজিদ নেই কেন। অথচ আমার চোখে দেখা ৯৮ শতাংশ পর্যটকই মুসলিম।’ এর পরে তিনি হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজহারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে আর একটি পোস্টে হেফাজতে ইসলামের ওই নেতার সঙ্গে একটি ছবি আপলোড করে লেখেন— ‘সীতাকুণ্ড পর্বতের চূড়ায় মসজিদ ৯০শতাংশ কনফার্ম’।
এর পরেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। স্থানীয় মন্দির কমিটি জানিয়েছে, নেপালের এক রাজা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় শিবমন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শিবমন্দিরটি অন্যতম। কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য অশোক চক্রবর্তী একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘নেপালের এক রাজা চন্দ্রনাথ মন্দির করে দিয়েছিল ৬০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই জায়গার বিশাল অংশ এখানে দান করেছিলেন।’’ তিনি জানান, পৌরাণিক মতে এই এলাকায় রাম এবং সীতা স্নান করেছিলেন, তার থেকেই এই স্থানটির নামহয় সীতাকুণ্ড।
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন। ওই মন্দির এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক, সীতাকুণ্ডের ওসি-সহ প্রশাসনের লোকজন। পরে উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণের কোনও উদ্যোগের প্রমাণ মেলেনি। চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনও অনুমতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।’ ওই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর। এর পরেই হেফাজতের নেতা হারুন ইজহার বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল ওই এলাকায় মসজিদ হলে তাঁরা আর্থিক সহায়তা করবেন। কিন্তু আমাকে এটা বলা হয়নি যে সেখানে হিন্দুদের সম্পত্তি রয়েছে।’’
মন্দির কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী এই তীর্থস্থানে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)