Advertisement
E-Paper

২০১ দিনে স্থানীয় সংক্রমণ নেই একটিও, করোনা পরিস্থিতিতে নজির তাইওয়ানের

গত ১২ এপ্রিল শেষ বার তাইওয়ানে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০৯
করোনা সামাল দেওয়ায় অন্যান্য দেশকে টেক্কা তাইওয়ানের।

করোনা সামাল দেওয়ায় অন্যান্য দেশকে টেক্কা তাইওয়ানের।

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কোভিডের প্রকোপে দৈনিক প্রাণহানিও আব্যাহত। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে ফ্রান্স এবং জার্মানির মতো দেশে। অতিমারি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ভারতও। এমন পরিস্থিতিতে সকলকে টেক্কা দিয়ে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখায় নজির গড়ল তাইওয়ান। দীর্ঘ সাড়ে ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে নতুন করে কোনও স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।

গত ১২ এপ্রিল শেষ বার তাইওয়ানে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসে। তার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২০১ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে কোনও স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি সেখানে। কোভিডের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে যখন ব্যস্ত গোটা দুনিয়া, সেইসময় তাইওয়ানের এই কৃতিত্ব নজর কেড়েছে সকলের। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন টুইটারে খোলাখুলি লিখেছেন, ‘কী করে এমন করে দেখাল তাইওয়ান? আসলে বিজ্ঞানে আস্থা রয়েছে ওদের’।

তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লক্ষ। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫৫৩ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন সেখানে। করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। কিন্তু কী করে এই অসাধ্য সাধন করল তাইওয়ান? সময় থাকতে সে দেশের সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে বলেই করোনা তাইওয়ানকে কাবু করতে পারেনি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াতে পারে আগেই তা আঁচ করতে পেরেছিল সে দেশের সরকার। তাই জানুয়ারিতেই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। রাশ টানা হয় উড়ান পরিষেবার উপরও। তাতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

আরও পড়ুন: বিপুল চাহিদা, উৎপাদনে ঘাটতি, থামল রাশিয়ার কোভিড টিকার প্রয়োগ​

দৈনন্দিন জীবনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাও সংক্রমণ প্রতিরোধে তাইওয়ানকে সাহায্য করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানিয়েছেন, কোথাও সংক্রমণ ধরা পড়লে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আগে সেই ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, তা খুঁজে বার করায় জোর দিয়েছিল সে দেশের সরকার। তাইপেইতে এক বার এক সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ১৫০ জনকে খুঁজে বার করা হয়েছিল। কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছিল তাঁদের প্রত্যেককে।

শুধু তাই নয়, সংক্রমিত বা তাঁর সংস্পর্শে আসা লোকজন কোয়রান্টিনে থাকাকালীন কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করছেন কি না, তা জানতে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছিল তাইওয়ান সরকার। প্রায় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষকে কোয়রান্টিনে পাঠিয়েছিল তারা। নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য এর মধ্যে ১০০০ জনকে জরিমানা করা হয়। তাই বেশিরভাগ মানুষই সরকারের নির্দেশ লঙ্ঘনের সাহস দেখাননি। একই ভাবে শহরাঞ্চল থেকে দূর-দূরান্তের মানুষকেও মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল তারা। এ সবের জেরেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে।

এ ছাড়াও, ২০০৩ সালে সার্সের প্রকোপে মহামারি দেখা দিয়েছিল তাইওয়ানে। সে বার কমপক্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষ এ বার অনেক বেশি সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক তথা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ পিটার কলিগনন বলেন, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা বিশ্বের মধ্যে এই মুহূর্তে তাইওয়ানই সবচেয়ে ভাল ফল করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল যে অস্ট্রেলিয়ার সমানই জনসংখ্যা ওদের। বহুতলগুলিতে বহু মানুষই ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকেন। তার পরেও গোষ্ঠী সংক্রমণের সবরকম সম্ভাবনাকেই নির্মূল করে দিতে পেরেছে ওরা।’’ অতিমারি পরিস্থিতিতেও হাতেগোনা যে ক’টি দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েনি, তার মধ্যে তাইওয়ান অন্যতম। অগস্ট মাসে সে দেশের সরকার জানায়, এ বছর তাদের জিডিপি ১.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ফ্রান্সের গির্জায় হামলা নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহাথিরের মন্তব্য সরাল টুইটার​

তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়া গেলেও এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় আসেনি বলে মত সে দেশের সরকারের। উড়ানের উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ায় বৃহস্পতিবার ফিলিপিন্স, আমেরিকা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা তিন জনের শরীরে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত দু’সপ্তাহে বিদেশফেরত মোট ২০ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। তাই সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

Coronavirus Taiwan COVID-19 SARS No Local Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy