Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Cornavirus

খাবার আনতেও অনুমতি লাগছে 

মার্চের গোড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এক দিন সকালে অফিসের জন্য বেরিয়ে দেখি, রাস্তায় হাতেগোনা কয়েক জন।

শুনশান ইটালির পথ।—ছবি এএফপি।

শুনশান ইটালির পথ।—ছবি এএফপি।

দীপশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বোলোনিয়া (ইটালি) শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৮:১০
Share: Save:

চেনা সুপার মার্কেটে গিয়ে ভেবেছিলাম, লোকজন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পরে বুঝলাম, তারা একে অন্যের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছে। এটা ‘করোনা-আবহ’।

ইটালির সঙ্গে পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। মাস তিনেক আগেই বর্ধমান শহরের বাড়ি থেকে গিন্নিকে নিয়ে এসেছি বোলোনিয়া শহরে। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করতে। ডিসেম্বরে যখন এসেছিলাম, বোলোনিয়ার ‘ডাউনটাউন’ বা ‘টাউন স্কোয়ার’ আলো ঝলমলে। কচিকাঁচা থেকে বয়স্কেরা ভিড় করছেন রাস্তায়। বিশাল ‘ক্রিসমাস ট্রি’, চকোলেটের গন্ধ আর তুষারপাতে সেজেছিল শহর। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিক থেকে।

সাধারণত হেঁটে অফিসে যেতাম। কয়েকদিন ধরে দেখছিলাম, পথচারীর সংখ্যা আচমকা কমে যাচ্ছে। ভিড় জমছে সুপার মার্কেটগুলিতে। এক দিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখলাম, যে সুপার মার্কেটে প্রায়ই যাই, সেখানে অস্বাভাবিক ভিড়। শহরবাসী হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ কী হতে চলেছে। আগেভাগেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাড়িতে মজুত করে রাখছিলেন তাঁরা। কিন্তু সত্যি বলতে, তখনও খুব একটা আমল দিইনি বিষয়টাকে। বলা ভাল, একেবারেই আঁচ করতে পারিনি পরিস্থিতি এতটা জটিল হতে চলেছে।

মার্চের গোড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এক দিন সকালে অফিসের জন্য বেরিয়ে দেখি, রাস্তায় হাতেগোনা কয়েক জন। প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ‘স্কার্ফ’ বা ‘মাস্ক’-এ। তত দিনে শহরে ‘মাস্ক’ অমিল। বেশ কয়েকটা বড় ওষুধের দোকানে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হল। বুঝলাম, বাইরে বেরনো সমীচীন নয়। অফিস ছুটি নিয়ে বাড়ি থেকে গবেষণার কাজ শুরু করলাম। সে দিনই দেশের প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা ঘোষণা করলেন, প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এমনকি, ওষুধ বা নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে গেলেও উপযুক্ত প্রমাণ দেওয়ার পরে, ছাড় মিলবে। এখন সে ভাবেই খাবার আর ওষুধ আনতে মাঝেমধ্যে বেরোচ্ছি।

তবে ওষুধের দোকান, সুপার মার্কেট খোলা রয়েছে। শহরের বাস ও ট্রেন চলাচলও মোটামুটি স্বাভাবিক। এর মধ্যেই খবরে শুনলাম, ভারত থেকে বিশেষ বিমানে মিলান থেকে প্রায় দু’শো জন ভারতীয়কে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি। বিশেষ করে ‘মাস্ক’, প্রয়োজনীয় ওষুধ পাইনি। তবে যা বুঝছি, ইটালির অন্য অনেক শহরের তুলনায় এ শহরের পরিস্থিতি ভাল। ভয়-আতঙ্কটা বেশি। স্থানীয় বাসিন্দা বয়স্ক লোকজন বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, এই প্রথম এমন সঙ্কটের মুখে ইটালি।

লেখক পেশায় সমুদ্রবিজ্ঞানী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cornavirus Pandemic Italy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE