Advertisement
E-Paper

আইএস বিতর্ক এড়িয়ে সন্ত্রাস নির্মূল চায় ঢাকা

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কিন্তু তার পরেও রবিবার দাবি করেছেন, ‘‘আইএস-এর অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই। দেশের ভেতরের জঙ্গিরাই গুলশনে হামলা চালিয়েছে।’’

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:১২
ক্ষণিকের স্তব্ধতা। নিহতদের স্মরণে রবিবার ঢাকার ভাষা শহিদ মিনারে। ছবি: এপি

ক্ষণিকের স্তব্ধতা। নিহতদের স্মরণে রবিবার ঢাকার ভাষা শহিদ মিনারে। ছবি: এপি

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কিন্তু তার পরেও রবিবার দাবি করেছেন, ‘‘আইএস-এর অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই। দেশের ভেতরের জঙ্গিরাই গুলশনে হামলা চালিয়েছে।’’

বছর দশেক আগে অবধি অনুষ্ঠান বা জনসভায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ খুন ছিল বাংলাদেশের জঙ্গিদের কৌশল। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে সে কৌশল বদলে তারা নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে নিশানা করে খুন করার পথ নিয়েছিল। আইএস-এর মুখপত্র ‘দাবিক’-এর এপ্রিল সংখ্যাতেও এই কৌশলের কথা স্বীকার করে নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল, কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে ‘বড়সড় অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এর পরে তারা ‘সব চেয়ে বড় অভিযান’ চালিয়ে ক্ষমতা দখলের পথেও এগোবে।

এমন খোলামেলা হুমকি এবং তার পরে গুলশনের ঘটনা, তবুও কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি তরফে আইএস বা আন্তর্জাতিক জঙ্গিচক্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করেই চলা হচ্ছে। বারবারই দাবি করা হচ্ছে, আইএস সেখানে নেই, জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন) বা হিজবুত তাহরি-র মতো দেশীয় জঙ্গি সংগঠনই খুনখারাপি চালাচ্ছে। ঠিক যেমন জেএমবি, হুজি, হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো জঙ্গি সংগঠন ২০০৩ থেকে তাণ্ডব করলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা দাবি করতেন, বাংলাদেশে কোনও জঙ্গি নেই। এক সময় এই সব সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও তিনি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘যদিও বাংলাদেশ এদের কোনও অস্তিত্ব নেই...’ আজও একই ভাবে ‘অস্বীকার’ চলছে, অথচ র‌্যাব (র‌্যাপিড অ্যাকশন ব‌্যাটেলিয়ন)-এর প্রধান বেনজির আহমেদই জানাচ্ছেন, রেস্তোরাঁর হামলাকারীরা সকলেই সম্পন্ন পরিবারের ছেলে, ঢাকার নাম করা স্কুল-কলেজের ছাত্র, এক জনের বাবা শাসক দলের নেতাও। পুলিশ কর্তার ঘোষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে, নজর এড়িয়ে সমাজের উচ্চ মহলেও মগজ ধোলাইয়ের কাজ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। সুতরাং মাদ্রাসাগুলিই জঙ্গিদের আঁতুড়ঘর— এমন সহজ সমীকরণের জায়গা আর রইল না।

তা হলে কি লাগাতার অস্বীকার-নীতির সুযোগ নিয়েই বাংলাদেশে আইএস তাদের ডালপালা ছড়াচ্ছে?

শুক্রবার রাতে নিরাপত্তায় মোড়া গুলশনের কূটনৈতিক এলাকায় হামলা কিন্তু ঢাকাকে রাতারাতি মুম্বই, লন্ডন, মস্কো বা বাগদাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে দিল, যেখানে জঙ্গিরা সংগঠিত হামলা করে দেদার গণহত্যা চালিয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে এই ধরনের জঙ্গি হানা দেখেনি। পণবন্দিদের মুক্ত করার জন্য সেনা অভিযানও চালাতে হয়নি। তবে সরকার কেন এখনও তাদের অস্তিত্ব মানতে নারাজ?

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়— আইএস আছে না নেই, এই বিতর্কে না-গিয়ে সমস্যার মূলোৎপাটন করাই সরকারের লক্ষ্য। ধারাবাহিক অভিযানে একের পর এক জঙ্গি সংগঠনের কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দিন পনেরো আগেও কয়েক হাজার জঙ্গি ও দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে। ধর্মের নামে তরুণদের মগজ ধোলাই বন্ধ করতেও বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সন্দেহ, হতে পারে কোণঠাসা অবস্থায় মরণকামড় দিতেই জঙ্গিরা গুলশনে হামলা চালিয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের কথা থেকে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক জঙ্গিযোগের কথা অস্বীকার করলেও সরকার হাত গুটিয়ে বসে নেই। আসল কাজটা ঠিকই করা হচ্ছে।

কিন্তু তা হলে ‘অস্বীকার’-এর প্রয়োজন হচ্ছে কেন আদৌ? ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এর কারণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশকে আইএস উপদ্রুত বলে তুলে ধরে সরকার বদলে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে প্রভাবশালী একটি আন্তর্জাতিক মহল। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু-ও রবিবার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘নানা কারণে বিএনপি-জামাত জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চায় কেউ কেউ।’’ এর আগে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে মার্কিন কূটনীতিকরা বিএনপি-জামাতের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধও বেধে যায় আমেরিকার। নয়াদিল্লি দৃঢ় ভাবে হাসিনার পক্ষে দাঁড়ালে ওবামা প্রশাসন সুর নরম করে। তার পরেও চক্রান্ত থামেনি, বলে দাবি পর্যবেক্ষকদের। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, পাকিস্তানকে দিয়ে জঙ্গিদের সংগঠিত করে নাশকতা চালানো হচ্ছে। জামাতের জোটসঙ্গী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন এবং জঙ্গিদের সমর্থন জুগিয়ে চলেছেন। যদিও বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি এই অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘আমাদের দল কখনও জঙ্গিদের সমর্থন করে না।’’

Isis Terrorism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy