মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বসে থেকে দুই দেশকে শান্তিচুক্তিতে সই করিয়েছিলেন। সেই শান্তিচুক্তি ভেঙে কম্বোডিয়ায় সোমবার বিমানহানা চালাল তাইল্যান্ড। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে। তাইল্যান্ডের দাবি, বিপক্ষই আগে হামলা চালিয়েছে।
তাইল্যান্ড সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল উইনথাই সুবারি জানিয়েছে, সোমবার কম্বোডিয়ার হানায় তাঁদের দেশে এক তাই সেনার মৃত্যু হয়েছে। তাইল্যান্ডের অনুপং সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে মর্টার ছুড়েছিল কম্বোডিয়া। ওই ঘটনায় সাত জন তাই সেনা আহতও হয়েছেন। তার পরেই সে দেশের সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তাই সেনা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের স্থানীয় সময় ভোর ৩টে নাগাদ কম্বোডিয়া হামলা শুরু করেছিল। কম্বোডিয়া সীমান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে সরানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই অভিযোগ মানেনি। তারা জানিয়েছে, তাইল্যান্ডের এই দাবি ‘মিথ্যা’। তারা চুক্তি ভঙ্গ করেনি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে কম্বোডিয়া। পাশাপাশি কম্বোডিয়া সেনা বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে, তাদের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা নাগাদ হামলা চালিয়েছে তাই সেনা।
তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের। তবে চলতি বছরে সেই বিরোধ চরমে ওঠে। দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায়। সেই আবহে ট্রাম্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেন। গত অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় যান ট্রাম্প। সেখানে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করান তিনি। সেই চুক্তিই ভঙ্গ হওয়ার অভিযোগ।
বিতর্কিত ‘পান্না ত্রিভুজ’-এর দখলদারি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টানাপড়েন চলছে ব্যাঙ্কক-নম পেনের মধ্যে। তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং আর এক পড়শি দেশ লাওসের সীমান্তবর্তী ওই ভূখণ্ডের দখল নিয়ে ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজে) যে রায় দিয়েছিল, তা অনেকটা কম্বোডিয়ার পক্ষেই গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে কম্বোডিয়া সেনা সেখানে শিবির ও পরিখা নির্মাণের তৎপরতা শুরু করার পরে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া।
গত জুলাইয়ে সেই সংঘর্ষ চরমে ওঠে। দু’দেশের অনেকেই প্রাণ হারান। সীমান্তবর্তী এলাকা ছেড়ে পালানো শুরু করেন অনেকে। তখন ট্রাম্প দু’দেশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, তারা যদি সংঘর্ষ বন্ধ না-করে, তবে কারও সঙ্গেই আর আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তিতে যাবে না। ট্রাম্পের চাপে দুই দেশ বাণিজ্যচুক্তি করলেও তা ভাঙার অভিযোগ উঠল তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে।