প্রথমে গোলাম রাব্বি। তার পর বিকাশ চন্দ্র সরকার। এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হল বাংলাদেশের দুই সরকারি কর্তাকে। অভিযোগের তির দু’টি ক্ষেত্রেই নাইট ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। নকল এনকাউন্টারে খুন করে ফেলার হুমকি দিয়ে মোটা টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিল পুলিশ। অভিযোগ আক্রান্তদের।
বিকাশ চন্দ্র দাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাফাই বিভাগের ইনস্পেক্টর। তাঁর অভিযোগ, ভোররাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিস যাওয়ার পথে ঢাকার মির হাজিরবাগ এলাকায় চার জন তাঁর পথ আটাকায়। ছিনতাইকারী ভেবে নিজের বাইক ফেলে পালান বিকাশবাবু। কিন্তু ওই চার জন বিকাশ চন্দ্র দাসকে ধরে ফেলেন। পুলিশের বেধড়ক মারে অসুস্থ বিকাশ চন্দ্র দাস ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে জানালেন, ধরে ফেলার পর ওই চার জন নিজের পরিচয় দেন পুলিশকর্মী হিসেবে। বিকাশবাবু জানান, ইউনিফর্ম পরে না থাকায় তিনি বুঝতে পারেননি তাঁরা পুলিশকর্মী। ছিনতাইকারী ভেবে বাইক ফেলে পালিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশকর্মীরা কোনও কথা শুনতে নাকি রাজি হননি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাফাই বিভাগের ইনস্পেক্টর হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও বিকাশবাবুকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সকাল হওয়ার পর বিকাশবাবুর পরিজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। স্থানীয় থানার ওসি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তোলা আদায় করতে না পেরে বিকাশ চন্দ্র দাসকে পুলিশ মারধর করে বলে শোনা যাচ্ছে।
শনিবার রাতে একই রকম ঘটনার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পদস্থ কর্তা গোলাম রাব্বি। তাঁর ক্ষেত্রে ঘটনা আরও ভয়াবহ। শনিবার রাতে এক আত্মীয়ার বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন রাব্বি। পুলিশ পিছন থেকে জামার কলার ধরে তাঁকে থামায় বলে অভিযোগ। রাব্বি জানিয়েছেন, পুলিশ দাবি করে তিনি নিষিদ্ধ জিনিসপত্র এবং মাদকের কারবারি। তিনি অস্বীকার করলেও পুলিশ কোনও কথায় কান দেয়নি। তাঁকে টেনেহিঁচড়ে তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে। সারা রাত ঢাকার রাজপথে টহলরত সেই গাড়িতে রাব্বির উপর নির্য়াতন চলতে থাকে। চড়-থাপ্পড়, রুলের গুঁতো, রডের আঘাত, পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় মারা এবং আরও নানা অত্যাচার চলতে থাকে। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে তাঁকে ছাড়া হবে না বলে পুলিশ নাকি হুমকি দিতে থাকে। রাব্বি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি অ্যাঙ্করিং-ও করতেন। ফলে প্রশাসনের উপর মহলে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের কবল থেকে মুক্তি পেতে তিনি নিজের এই সব পরিচয় প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে অত্যাচার আরও বাড়ে বলে গোলাম রাব্বির দাবি। পুলিশকর্মীরা নিজেদের মধ্যে নকল এনকাউন্টার সাজিয়ে রাব্বিকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করতে থাকে বলে অভিযোগ। ভোরের দিকে তাঁকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন রাব্বি রক্তাক্ত। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, রাব্বির শরীরের নানা অংশে গুরুতর আঘাত রয়েছে।
রাব্বি আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়ানোর পর এক অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে ক্লোজ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy