Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

কূটনীতিকের গাড়ি আক্রান্ত, প্রতিবাদ ঢাকার

নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সেই বার্তা দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাতত তাঁর মন্ত্রীদের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পোড়ানো হচ্ছে টায়ার।—ছবি পিটিআই।

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পোড়ানো হচ্ছে টায়ার।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, গুয়াহাটি ও ঢাকা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম ইনিংসে প্রতিবেশী কূটনীতি নিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছে মোদী সরকার। একমাত্র ধারাবাহিক ভরসার জায়গাটি ছিল ঢাকা। কূটনীতিকেরা বলছেন, নাগরিকত্ব আইন পাশের পরবর্তী পর্যায়ে সেই ভরসা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ ভারত-বিরোধী তিক্ততা ক্রমশ বাড়ছে বাংলাদেশে। বুধবার রাতে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনারের গাড়ি আক্রান্ত হওয়ার পরে তিক্ততা আরও বেড়েছে।

গত কাল হাসিনা সরকারের দুই মন্ত্রী পর পর ভারত সফর বাতিল করেছেন। নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সেই বার্তা দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাতত তাঁর মন্ত্রীদের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাসকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডেকে পাঠিয়ে কূটনীতিক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত বিদেশ সচিব। গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের কূটনীতিক ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবিও জানানো হয়। ঘটনার পরেই গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের অফিস এবং বাসভবনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছেন ভারতীয় দূত।

বুধবার রাতে স্ত্রী এবং বাবা-মাকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে গুয়াহাটিতে নিজের বাড়ির দিকে ফিরছিলেন বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার শাহ মামুদ তনভির মনসুর। অসম পুলিশের গাড়ি ছিল সামনে। বেহারবাড়ি ফাঁড়ির কাছে জনতা পথ আটকে পাথর ছুঁড়তে থাকে। মনসুরের বাবা আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে আহত হন। কিছু মানুষের উদ্যোগে পরিস্থিত শান্ত হলে তার পরে পুলিশ সহকারী হাইকমিশনারকে তাঁর বাসভবনে পৌঁছে দিলেও তাঁর বাবা-মাকে মাঝরাতেই বিমানবন্দরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁরা ঢাকায় ফিরে যান। এ ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন ঢাকা।

দুই মন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে, শুক্রবার তা কাটাতে চেয়েছেন বাংলাদেশের শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ও শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণেই আমাদের মন্ত্রীদের সফর বাতিল হয়েছে। বয়কটের প্রশ্নই নেই। ক’দিন পরেই তো তাঁরা যাচ্ছেন!’’ মন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক বন্ধুত্বের সম্পর্ক খুবই মজবুত। সরকার তা ক্ষুণ্ণ হতে দেবে না।’’ নাগরিক আইন নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সংসদে কোনও আইন পাশ হলে তা সে দেশের ঘরোয়া বিষয়। আমাদের কিছু বলাটাই সমীচীন নয়!’’

নাগরিকত্ব বিলের জেরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘মিত্র রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা কেন তৈরি করা হচ্ছে?’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমরা সরকারের বিদেশনীতির সমালোচনা করি না। কিন্তু বিজেপির শস্তা রাজনীতির কারণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে।’’

তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধুকে শত্রু বানাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE