বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশের ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বৃহস্পতিবার থেকে মুড়ে ফেলা হয়েছিল নিরাপত্তার বেড়াজালে। শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল ওই চত্বর জুড়ে। বিএনপি-র ছাত্র ও যুব সংগঠন, ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই ভিড় করতে শুরু করেন ধানমন্ডির আশপাশে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক সন্দেহ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তাঁরা। এমনকি, গণপিটুনি দিতেও কসুর করেনি। তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পাননি কোনও মহিলাও। অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে চার-পাঁচ জনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শেখ হাসিনার দলের কর্মী ভেবে ছাত্র শিবিরের এক কর্মীকে মারধর করে বিএনপি। শেখ মুজিবকে সমাজমাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেটপাড়ায় কটাক্ষের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের দুই অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন এবং জয়া এহসান।
মুজিবুরের ভেঙে দেওয়া বাড়িতে এ দিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফুল দিতে এসে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় এক মহিলা। রাজধানীর একটি এলাকার বাসিন্দা ওই নারী নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। আমি ফুল দিয়াই যামু। আমি এই দেশের নাগরিক। অথচ ফুল দিতে দেওয়া হল না।’’ পুলিশকর্মীরা তাঁকে জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বন্ধ আছে। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে নারীর হাতে থাকা ফুল সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন কেড়ে নেন। এক সময় উপস্থিত জনতা তাঁকে হেনস্থাও করে। পরে পুলিশ ওই মহিলাকে রিকশায় তুলে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের সদস্য তামজিদ ইসলাম বলেন, ‘‘ওই মহিলা বারবার বলছিলেন, হাসিনা খুন করেননি। তখনই উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর হাতে থাকা ফুল ফেলে দেয়।’’ এই ঘটনার পরে দুপুর ১২টা নাগাদ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে আসেন পেশায় রিকশাচালক বলে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। তাঁকে কয়েকজন মারধর করে ওই ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের গাড়িতে বসে তিনি বলেন, ‘‘কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নই। বঙ্গবন্ধু ভালবাসি বলে ফুল দিতে এসেছিল।’’ উপস্থিত বিএনপি, শিবিরের হাতে এ দিন মার খেয়েছেন আরও দু’জন। জনতার মারে এক জনের মাথা ফেটে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সক্রিয় ভাবে পথে নেমেছিলেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী বাঁধন। মুজিবুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়লেন তিনি। গত বছরেও মুজিবুরের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে নিয়ে তিনি লিখেছিলেন, “বিনম্র শ্রদ্ধা।” সেই একই পোস্ট এই বছর করেছেন তিনি। তার প্রেক্ষিতে একজন লিখেছেন, “এতই যদি শ্রদ্ধা থাকত তবে এই দেশটাকে এ ভাবে ধংসের মুখে ফেলতেন না। এখন নিজেরাই খাবার ভাত পান না, তাই নাটক করছেন।” বাংলাদেশের আর এক অভিনেত্রী জয়া আহসানও মুজিবকে শ্রদ্ধা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। এক কট্টরপন্থী তাঁকে লেখেন, “এক ভারতীয় এজেন্ট যে আর এক ভারতীয় এজেন্টকে সমর্থন জানাবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)