Advertisement
E-Paper

Dilip Kumar Death: পেশোয়ারের বাড়িতে এখনও সজীব তাঁর স্পর্শ

দিলীপসাবের জন্মশহর পেশোয়ারে তার ঢের আগেই শোকোচ্ছ্বাস ঝামরে পড়েছে রাজপথে। মহল্লা খুদাদাদে দিলীপ কুমারের ভাঙাচোরা ম্লানরঙা দোতলা বাড়িটার সামনেও শোনা গিয়েছে প্রার্থনার কোরাস।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ০৫:২৩
ভাইপো মহসিন আজিজের পরিবারের সঙ্গে দিলীপ কুমার।

ভাইপো মহসিন আজিজের পরিবারের সঙ্গে দিলীপ কুমার। নিজস্ব চিত্র

শেষ দেখা মুম্বইয়ে। ২০১৩। আট বছর আগের সেই মুহূর্তটা মনে আছে পাকিস্তানের সেনেটর মহসিন আজিজের। “চাচাজান আমায় জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলেন, বাঁ গালে, না-না ডান গালেই তো ঠোঁট ছুঁইয়েছিলেন তিনি। তাকিয়ে দেখি দিলীপ কুমারের চোখজোড়া টলটল করছে”, বুধবার বিকেলে থেমে-থেমে ফোনে কথা বলছিলেন মধ্য পঞ্চাশের প্রৌঢ়।

পাকিস্তানে খাইবার-পাখতুনখোওয়া প্রদেশ থেকে নির্বাচিত তেহরিক-ই-ইনসাফের সেনেটর মহসিন। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর সব থেকে বড় পরিচয় সেটা নয়। সদ্য প্রয়াত বলিউডি কিংবদন্তী বা এই উপমহাদেশের অখণ্ড সাঁকো দিলীপ কুমারের তিনি ভাইপো। মহসিন সাহেবের বাবা আজিজ জানের আপন মামাতো ভাই মহম্মদ ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার। ইসলামাবাদ থেকে পেশোয়ারের পথে যাওয়ার সময়ে এ দিন মহসিনকে ফোনে ধরা গেল।

দিলীপসাবের জন্মশহর পেশোয়ারে তার ঢের আগেই শোকোচ্ছ্বাস ঝামরে পড়েছে রাজপথে। মহল্লা খুদাদাদে দিলীপ কুমারের ভাঙাচোরা ম্লানরঙা দোতলা বাড়িটার সামনেও শোনা গিয়েছে প্রার্থনার কোরাস। দুপুরেই ওই বাড়ি সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছিল খাইবার-পাখতুনখোওয়া প্রদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর আব্দুল সামাদের নেতৃত্বে। বছর আটত্রিশের সামাদের আক্ষেপ, ১৯৮৮তে দিলীপ কুমার পেশোয়ারে যাওয়ার সময়ে বড্ড পুঁচকে ছিলেন তিনি। তাই দেখা হয়নি। তবে ‘মুঘল-ই-আজম’ তো তাঁরও প্রিয়, নিজের শহরের বরণীয় নায়ক এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ২৫০০ বছরের পুরনো নগর পেশোয়ার, এ দুয়ের জন্যই বিশেষ গর্বিত সামাদ।

বুধবার তাঁর পেশোয়ারের বাড়িতে অভিনেতাকে শ্রদ্ধা।

বুধবার তাঁর পেশোয়ারের বাড়িতে অভিনেতাকে শ্রদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

“মহাভারতের গান্ধারের ৯০ শতাংশই এই পেশোয়ার এবং খাইবার মুলুকে। আর ওঁর বাড়ির কাছেই মধ্য এশিয়ার বিখ্যাত বাজার কিসসা খোয়ানির জৌলুস তো দিলীপসাব নিজেও দেখেছেন ছোটবেলায়।” ছোট্ট ইউসুফের বাবা ফল ব্যবসায়ী লালা গুলাম সারওয়ার খানের বাড়ি থেকে হাঁটাপথ পৃথ্বীরাজ কপূরদের হাভেলির গা ঘেঁষেই এখনও বহাল কিসসা খোয়ানির বাজার। নামেই মালুম, তা সান্ধ্য গল্প শোনার আখড়া। দিলীপ কুমার বছর দশেক আগেও লিখেছেন, ওই বাজারে শোনা সারা দুনিয়ার সওদাগরদের মুখের বিচিত্র গল্প, শৌর্য, প্রেম, নিষ্ঠুরতা বা দৈবী অভিঘাতের কাহিনি কী ভাবে নিজের অজান্তেই রুপোলি পর্দায় গল্প বাছাইয়ে তাঁর চোখ খুলে দিয়েছিল।

সামাদ সাহেব বলছিলেন, অনেক আগে থেকে কথা চললেও দিলীপসাব ও কপূর পরিবারের বাড়ি সংরক্ষণে এ বার সত্যি হাত পড়েছে। পাকিস্তানের অ্যান্টিকুইটি বা প্রাচীনত্ব রক্ষা আইনের সুরক্ষা জারি হয় গত বছর। নইলে নতুন মালিক কবে বাড়ি ভেঙে শপিং মল করে ফেলতেন। এক মাস আগে প্রদেশের সরকার দু’কোটি ৪০ লক্ষ পাক মুদ্রায় বাড়িটা কিনেছে। সামাদের কথায়, “এখন লক্ষ্য, দু’বছরে দিলীপসাবের বাড়িতে বলিউড ও পাকিস্তান বিষয়ক মিউজিয়ম তৈরি।”

দেশভাগের পরে সম্ভবত বার দুয়েক এই নায়ককে কাছ থেকে দেখেছে পেশোয়ার। কিন্তু নজরুল, মান্টো বা ঋত্বিকের মতো দিলীপ কুমারও আদতে ভাগ হওয়ার নয়, তা বুঝিয়েছে তাঁর এই মৃত্যু দিন।

“শেষ সময়ে সায়রা বানুর একনিষ্ঠ সেবাও চাচাজানের জীবনে বিরাট প্রাপ্তি”, বার বার বলছিলেন মহসিন। শেষ দেখার আর একটি স্মৃতি, মুম্বইয়ে দিলীপ কুমারের বাড়ির বারান্দায়। “আকাশে চোখ তুলে হঠাৎ পেশোয়ারি হিন্দকো ভাষায় চাচাজান বললেন, ‘উপরে তিনি আছেন’, এর পরে নীচে তাকিয়েই বললেন ‘আশা রাখি মানুষের বুকেও আছেন তিনি’! ওঁর গলার স্বরে একটা কষ্ট ছিল। জানি না কেন!”

ঘরের ছেলেকে হারিয়ে সেই বিষাদই এখন তীব্র ভাবে বাজছে খাইবার মুলুকের প্রাচীন শহরে।

Dilip Kumar Peshawar Obituary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy