ডোনাল্ড ট্রাম্প
বড়দিনে বড় মুখ করে ইরাকে গিয়ে মার্কিন সেনার বিশেষ বাহিনীর ১০০ জন ও সেনাকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে চমক দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হঠাৎ সফর ইরাকের মানুষ মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না।
একটা দেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের বালাই নেই! এটা কি আদৌ কূটনৈতিক সৌজন্য— প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প। এক বিবৃতিতে ইরাকি প্রশাসনের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দেল মেহদির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক কী ভাবে আয়োজন করা যায়, তাই নিয়ে মতানৈক্যের জেরে বৈঠকের বন্দোবস্ত শেষ পর্যন্ত করা যায়নি। তাই দুই নেতার কথা হয়েছে ফোনে। কিন্তু এ দেশের সংবাদমাধ্যমে গুজব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নাকি প্রধানমন্ত্রী মেহদিকে আল-আসাদ সেনাঘাঁটিতে (যেখানে ট্রাম্প নেমেছিলেন) ডেকে পাঠিয়েছিলেন। মেহদি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি।
সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরাক বিশেষজ্ঞ ফানার হাদ্দাদ বলছেন, ‘‘সেনাঘাঁটিতে এ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে পাঠানো ইরাকের প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— এমনটা মনে করছেন ইরাকের সাধারণ মানুষ।’’ ইরাকের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বলেছেন, ‘‘যে ভাবে ট্রাম্প ইরাক ঘুরে গেলেন, তা কূটনৈতিক নিয়ম বিরোধী এবং কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সঙ্গে এমনটা করা যায় না। এর ফলে ইরাক-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’
যদিও এক বিশেষজ্ঞের মতে, সিরিয়া থেকে সদ্য মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরে ইরাকেও এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই চিন্তা দূরে ঠেলতেই ট্রাম্পের এই সফর। কাল অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানান, এই মুহূর্তে আমেরিকার নীতি, বিভিন্ন দেশের সেনা-জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু ইরাক তার মধ্যেও ব্যতিক্রম— মনে করেন ইরাক নীতি বিশেষজ্ঞ হিশাম আল-হাশেমি। তাঁর মতে, ‘‘ইরাক তার কৌশলগত অবস্থানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ইরাকে মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকলে জর্ডন এবং সৌদি আরব আশ্বস্ত থাকে। তুরস্ক-ইরান-ইরাক ত্রিভুজের ক্ষেত্রেও সেটা একটা ভারসাম্য বজায় রাখে।’’
এমনিতে সাদ্দাম হুসেনকে হটাতে ২০০৩ সালে আমেরিকার অভিযানের পর থেকে ইরাক-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বহু বদল ঘটেছে। এ দেশে মার্কিন সেনার উপস্থিতি নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল। তবে ২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীকে ঠেকাতে আমেরিকা যখন আন্তর্জাতিক জোট গঠন করে, সেই সময় থেকে সমীকরণ অনেকটাই পাল্টে যায়।
তবে ইরাকের একটা অংশের উপরে আবার ইরানের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। যারা দেশে মার্কিন প্রভাব নষ্ট করতে সক্রিয়। ইরাকের পার্লামেন্টেও তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠী রয়েছে। এই ধরনের গোষ্ঠীগুলোও ট্রাম্পের সফরে মারাত্মক চটেছে। ইরান সমর্থিত হারাকত আল-নুজাবা গোষ্ঠীর যেমন দাবি, ‘ইরাকে মার্কিন সেনার উপস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্ব-বিরোধী। সরকারের উচিত, মার্কিন বাহিনীকে দেশ থেকে বার করে দেওয়া। ট্রাম্প যে ভাবে ইরাককে অপমান করলেন, তার শাস্তি পেতে হবে।’ এই গোষ্ঠীগুলি চায় মার্কিন সেনাকে সরাতে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy