দিন কয়েক আগে এক মহিলা সাংবাদিককে ‘শূকর’ বলেছিলেন। মঙ্গলবার আমেরিকার এক মহিলা সাংবাদিককেও কটূক্তি করার অভিযোগ উঠল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই মহিলা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকা সফরে বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সৌদির যুবরাজকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেই সময় এবিসি নিউজ়-এর এক মহিলা সাংবাদিক মেরি ব্রুস যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টিন এবং সাংবাদিক খাসোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন। আর সেই প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার পরই মহিলা সাংবাদিককে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, ওই চ্যানেলের সম্প্রচারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও মহিলা সাংবাদিককে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।
এর আগেও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের যাতায়াতের জন্য নিযুক্ত এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেই ভিডিয়ো মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসে (আনন্দবাজার ডট কম তার সত্যতা যাচাই করেনি)। ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে, ব্লুমবার্গ-এর সাংবাদিক ক্যাথরিন লুসির দিকে আঙুল তুলে ট্রাম্প বলছেন, ‘‘চুপ। চুপ করো শূকর।’’ যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত জেফরি এপস্টিনের নথি কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন লুসি।
মঙ্গলবার সৌদির যুবরাজের উপস্থিতিতে ওভাল অফিসে ট্রাম্পকে একের পর এক প্রশ্ন করেন মেরি। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, সৌদির সঙ্গে ট্রাম্পর পরিবারের বাণিজ্যের বিষয়টি কি ‘স্বার্থের সংঘাত’ নয়! এর পরে মেরি ২০১৮ সালে সৌদির সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন করেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘‘আমেরিকার গুপ্তচর বিভাগের রিপোর্ট বলছে ওই সাংবাদিককে খুন করিয়েছেন আপনি। আপনি এই ওভাল অফিসে রয়েছেন বলে ৯/১১-এর ভুক্তভোগী পরিবারগুলি ক্ষুব্ধ। আমেরিকানরা কেন আপনাকে বিশ্বাস করবেন?’’
মেরিকে থামিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এবিসি ভুয়ো খবর দেয়। বাণিজ্যের বিষয়েও সবচেয়ে খারাপ।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও দাবি করেন, ট্রাম্প সংস্থার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। এখন তাঁর বড় দুই পুত্র এটি চালান। সোমবারই ওই সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, মলদ্বীপে একটি রিজর্ট তৈরি করবেন তারা। এই নিয়ে সৌদির ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তিও করেছে সংস্থাটি।
ট্রাম্প দাবি করেন, খাসোগির খুনে সৌদির যুবরাজের কোনও হাত নেই। যদিও আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, ওই খুনের সম্মতি দেন যুবরাজই। মঙ্গলবার মেরির কথা মাঝপথে থামিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের অতিথিকে এই ধরনের প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন না।’’ পরে মেরি এপস্টিন নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁকে আবার কটাক্ষ করেন ট্রাম্প। তিনি মেরিকে ‘বিপজ্জনক সাংবাদিক’-ও বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি যে প্রশ্ন করছেন, তা নিয়ে আমার সমস্যা নেই। আপনার ভঙ্গি নিয়ে সমস্যা। আপনি একজন বিপজ্জনক সাংবাদিক।’’
আরও পড়ুন:
এপস্টিনের সঙ্গে একসময় ট্রাম্পের বন্ধুত্ব ছিল। দু’জনের একাধিক ছবি রয়েছে একসঙ্গে। তবে ট্রাম্প বার বার দাবি করেছেন, যৌন অপরাধী হিসাবে এপস্টিনকে তিনি চিনতেন না। তাঁর অপরাধমূলক কার্যকলাপের কথা কিছুই জানতেন না। নিউ ইয়র্ক টাইম্স জানিয়েছে, আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভ্সের তদন্তকারী কমিটি হাজার হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথি পেয়েছে। এপস্টিনের ইমেলগুলি তারই অংশ। ট্রাম্প এবং এপস্টিনের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে এই নথিপত্র।