Advertisement
E-Paper

ইউক্রেনে যাবে না মার্কিন সেনা, জানালেন ট্রাম্প! যুদ্ধবিরতির পথ খুলবে পুতিন-জ়েলেনস্কি বৈঠকে?

দ্ধবিরতির চাবিকাঠি যাঁর হাতে, সেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার ওভাল অফিসে ছিলেন না। গত ১৫ অগস্ট আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ়ে মার্কিন সেনাঘাঁটি ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’-এ ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে নিজের শর্তের কথা জানিয়ে মস্কো ফিরে গিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ২৩:৪৪

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এক সঙ্গে এমন তারকা সমাবেশ সাম্প্রতিক কালে দেখেনি হোয়াইট হাউস। সৌজন্যে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বৈঠক। ওভাল হাউসে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। সেখানে ছিলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার স্টাব, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ়, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন এবং নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট।

কিন্তু যুদ্ধবিরতির চাবিকাঠি যাঁর হাতে, সেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার ওভাল অফিসে ছিলেন না। গত ১৫ অগস্ট আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ়ে মার্কিন সেনাঘাঁটি ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’-এ ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে নিজের শর্তের কথা জানিয়ে মস্কো ফিরে গিয়েছেন। বস্তুত, ক্রেমলিনের বাসিন্দার ‘কোর্টে’ই যে এখন যুদ্ধবিরতির ‘বল’ সে বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প স্বয়ং। জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “বৈঠক শেষে আমি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। পাশাপাশি, জ়েলেনস্কি এবং পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাবও দিয়েছি। ইতিমধ্যেই সেই বৈঠকের তোড়জোড় শুরু করা হচ্ছে। সেই বৈঠক হওয়ার পর, আমরা একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করব। সেখানে দুই রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন এবং আমিও থাকব।” সেই সঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্য, “প্রায় চার বছর ধরে এই যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের জন্য এই বৈঠক খুবই ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স, মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো এবং আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আমি আবারও সকলকে ধন্যবাদ জানাই।”

পুতিনের শর্ত, জ়েলেনস্কির আর্জি

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগেই ইউক্রেনের দুই আবদার খারিজ করেন ট্রাম্প। সোমবার সকাল ৬টা ৪৭ মিনিটে (ভারতীয় সময় অনুসারে) সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন, ২০১৪ সালে রাশিয়া অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রাইমিয়া আর ফেরত পাবে না ইউক্রেন। পাশাপাশি, ইউক্রেনের দীর্ঘ দিনের আর্জি খারিজ করে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো-র অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না জ়েলেনস্কির দেশ। ঘটনাচক্রে, পুতিন ওই জোড়া শর্তের কথা ১৫ অগস্ট আলাস্কায় জানিয়েছিলেন ট্রাম্পকে। এই আবহে মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসে জ়েলেনস্কি ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টিতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি।

ইউক্রেনে নয় মার্কিন সেনা

সোমবার জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘ইউরোপীয় দেশগুলির নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে যে কোনও সামরিক পদক্ষেপে নেতৃত্ব দিতে আমেরিকা প্রস্তুত।’’ ট্রাম্পের এই মন্তব্য আদতে ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের ইঙ্গিত কি না, তা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছিল বৈঠক শুরুর আগেই। কিন্তু মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সে দেশে সেনা পাঠাবে না আমেরিকা। তিনি বলেন, ‘‘ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন-সহ অন্যেরা ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে চায়। আমি মনে করি না, তাতে কোনও সমস্যা হতে পারে। তবে আমেরিকা সেনা পাঠাবে না ইউক্রেনে।’’ ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ‘ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স’ হিসাবে থাকবে ইউরোপীয় দেশগুলিই। তবে আমেরিকাও তাদের সাহায্য করবে। তবে মার্কিন সেনা না পাঠালেও ইউক্রেনকে ৯০০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা) মার্কিন অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি ওভাল অফিসের শান্তিবৈঠকেই চূড়ান্ত করে ফেলেছেন ট্রাম্প। জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, মার্কিন অস্ত্র কিনতে কিভকে অর্থসাহায্য করবে ইউরোপের দেশগুলি!

পুতিন-জ়েলেনস্কি ‘শর্তহীন’ বৈঠক

শীঘ্রই মুখোমুখি বসতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। তবে ওই বৈঠকে কোনও আগাম শর্ত চাপানো যাবে না। সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরে তা স্পষ্ট করেছেন জ়েলেনস্কি নিজেই। সোমবার প্রথমে জ়েলেনস্কির সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারেন ট্রাম্প। পরে ইউরোপীয় নেতারাও যোগ দেন বৈঠকে। দ্বিতীয় বৈঠকটি চলাকালীনই তা মাঝপথে থামিয়ে পুতিনকে ফোন করেন ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে খবর, একটি ত্রিপাক্ষিক (আমেরিকা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে) বৈঠকের জন্য পুতিনকে প্রস্তাব দেন ট্রাম্প।

মস্কোর দাবি, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে কথা হয়েছে দু’জনের। যদিও পরে জানা যায়, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। ওই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় থাকবেন শুধুমাত্র জ়েলেনস্কি এবং পুতিন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরে হোয়াইট হাউসের বাইরে জ়েলেনস্কি জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য রাশিয়াই প্রস্তাব দিয়েছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, তিনি পুতিনের সঙ্গে যে কোনও ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে ওই বৈঠকের জন্য কোনও আগাম শর্ত চাপানো চলবে না। হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে জ়েলেনস্কি বলেন, “আমি মনে করি নিঃশর্ত ভাবে আমাদের বৈঠকে বসা উচিত। যুদ্ধ থামানোর এই উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, তিনি এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য কোনও শর্ত আরোপ করতে চান না। কারণ, তিনি শর্ত চাপালে পুতিনও নিজস্ব শর্ত নিয়ে হাজির হবেন।

Russia-Ukraine War Donald Trump Volodymyr Zelenskyy Ukraine Russia USA Vladimir Putin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy