আমেরিকার প্রশাসন এর আগে যা-ই বলুক, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্য ইঙ্গিতই দিয়েছেন। সংবাদসংস্থা এপি জানাচ্ছে, ইরানে শাসকবদলের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবনাচিন্তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে (আমেরিকার সময়) জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ট্রাম্পের। তার আগে তেহরানে শাসকবদলের সম্ভাবনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানোর পরে হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছিল, সে দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কোনও ভাবেই আমেরিকার লক্ষ্য নয়।
রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের নাতান্জ়, ইসফাহান, ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকার সেনা। ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘সফল’ বলে বর্ণনা করেন। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স অভিযানের পরে বলেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট, আমরা শাসকবদল চাই না। ওদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চাই। তার পরে ইরানিদের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সমঝোতা নিয়ে কথা বলতে চাই।’’ তিনি এ-ও জানান যে, কূটনৈতিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চান তাঁরা। কিন্তু ভান্সের এই বক্তব্যের পরে এক দিন কাটতে না কাটতেই ট্রাম্প ইরানে শাসকবদলের সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘‘কেন সেখানে শাসকবদল হবে না?’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘শাসকবদল শব্দটা ব্যবহার করা রাজনৈতিক ভাবে ঠিক হবে না। কিন্তু যদি ইরানের বর্তমান শাসক সে দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়, তা হলে কেন শাসকবদল হবে না?’’ তার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি এ বার ইরানের আয়াতোল্লা আলি খামেইনি সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে আমেরিকা!
এর আগে ইজ়রায়েলও ইরানে শাসকবদল নিয়ে ‘পরস্পরবিরোধী’ কথা বলেছে। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ় দাবি করেছিলেন, আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ইরানের মসনদে থাকতে পারেন না! ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী জিডিয়ন সারের গলায় শোনা যায় ভিন্ন সুর। তিনি জানান, ইরানে শাসকবদল তাদের উদ্দেশ্য নয়, অন্তত এখনও পর্যন্ত। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানান, ইজ়রায়েলের মূল উদ্দেশ্য, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা। আর সে জন্যই পদক্ষেপ করছে নেতানিয়াহুর সরকার। তার আগে নেতানিয়াহু গত রবিবার প্রকাশ্যে তেহরানে ক্ষমতার পালাবদলে সক্রিয় হওয়ার জন্য ইরানের আমজনতার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। এ বার ট্রাম্পও কি সেই পথেই হাঁটছেন? সে কারণেই কি রবিবার হামলা চালিয়েছেন? চলছে জল্পনা।
আরও পড়ুন:
ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলার পরে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, হামলার পরে কী অবস্থা তিন পরমাণুকেন্দ্রের। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ কি হচ্ছে? ইরান অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ভয়ের কিছু নেই। পরমাণুকেন্দ্রগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। যদিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করে ভিন্ন দাবি করেছে। এই আবহে সোমবার ইরানের পশ্চিমে কেরমানশাহ শহরে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে তেলের।