এ বছর গোথেনবার্গের এক মাত্র দুর্গাপুজো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এনেছে। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে আনা নতুন মাতৃরূপিণী দুর্গাপ্রতিমা এ বার শোভা পাবে পুজো মণ্ডপে। দীর্ঘ চার মাস ধরে সমুদ্র ও স্থলপথ পেরিয়ে প্রতিমাটি গত সপ্তাহে গোথেনবার্গে পৌঁছেছে, প্রস্তুত দেবীর উপস্থিতিতে উদ্যাপনকে পূর্ণতা দান করতে ।
পুজোর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন গোথেনবার্গের পাঁচ জন মহিলা পুরোহিত। তাঁদের নেতৃত্বেই পুজো এক দিকে যেমন ঐতিহ্যের ধারক, অন্য দিকে তেমনই আধুনিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।
আজ ও আগামী কাল, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে গোথেনবার্গের সপ্তম বর্ষের দুর্গাপুজো। আমাদের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এক অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব— যে কেউ, যে সংস্কৃতিরই হোন না কেন, সকলে এখানে যোগ দিতে পারেন, পুজোর আনন্দ, আচার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেন।
প্রতি বছর আমাদের পুজো একটি নির্দিষ্ট থিম বেছে নেয়। এ বারের থিম হল ‘বাংলার দৃশ্যমান ঐতিহ্য’। এর মাধ্যমে আমরা হাজারদুয়ারির জাঁকজমক, পটচিত্রের বর্ণময় রূপ, ছৌ মুখোশের রহস্যময়তা এবং বাঁকুড়ার টেরাকোটা ঘোড়ার অনন্ত সৌন্দর্য তুলে ধরব। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সব সাজসজ্জা তৈরি হচ্ছে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত জিনিস পুনর্ব্যবহার করে, যাতে মণ্ডপটি যেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মণ্ডপের মতো চমকপ্রদ হয়ে ওঠে।
গথেনবার্গের দুর্গা পুজো। —নিজস্ব চিত্র।
সুইডেনে সেপ্টেম্বর ছুটির সময় না হলেও, আমরা সকলে মিলে মাসের পর মাস ধরে পরিশ্রম করি, যাতে বাঙালি, ভারতীয় এবং স্থানীয় মানুষেরা দুর্গাপুজোর আনন্দ ও নস্টালজিয়ায় ভেসে যেতে পারেন। দু’দিনব্যাপী এই উদ্যাপনে প্রথম দিনে হবে ষষ্ঠী ও সপ্তমী পূজা, এবং দ্বিতীয় দিনে অষ্টমী, সন্ধিপূজা, নবমী ও দশমীর পূজা। থাকবে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ ভোগ বিতরণ, ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ ও উলুধ্বনি সঙ্গে ধুনুচি নাচ, আর মহিলাদের অংশগ্রহণে সিঁদুরখেলা। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করি যাতে কলকাতার দুর্গাপুজোর আবহ প্রবাসের মাটিতেও পাওয়া যায়।
প্রতি বছরের মতো, এই বছরেও থাকবে, সন্ধ্যাবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক ও নানা পরিবেশনার মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীলতা ও প্রাণশক্তিকে নতুন করে উজ্জীবিত করব। একইসঙ্গে, এই অনুষ্ঠান আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য একটি শিক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে তারা নিজেদের শিকড় ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগোত হবে।
দুর্গাপুজোর সাথে পেটপুজোর একটা গভীর সম্পর্ক আছে। তাই আমাদের পূজোতে থাকছে রকমারি খাবারের স্টল— ফুচকা থেকে বিরিয়ানি, সবই মোটামুটি পাওয়া যাবে।
দু’দিনের আনন্দ শেষ হলেও পুজোর আবহ বাঁচিয়ে রাখতে, এ বছর আমরা প্রথম অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ করতে চলেছি। এই পত্রিকারমাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।
গোথেনবার্গের দুর্গাপুজো শুধু একটি উৎসব নয়— এটি সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার বিরলএক মুহূর্ত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)