শরতের আকাশে ভেসে ওঠে কাশফুলের সাদা ঢেউ, দূরদেশে প্রবাসী হৃদয়ে বাজে মায়ের আগমনী সুর। লিসবনে সেই আগমনী সুরই চতুর্থবারের মতো প্রতিধ্বনিত হবে, ‘ভূমি: ইন্ডিয়ান কালচারাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ ও ভারতীয় দূতাবাস, লিসবনের আন্তরিক সহযোগিতায়।
২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫— এই তিন দিনে সাজবে উৎসবের মহাসমারোহ। বিদেশের মাটিতে কর্মদিবসের ব্যস্ততা যখন বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সপ্তাহান্তই হয়ে ওঠে আমাদের আশ্রয়। তবে সপ্তাহান্তে আয়োজন হলেও, মহাষ্টমী, মহানবমী থেকে শুরু করে বিজয়ার বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি আচার পালিত হবে অক্ষরে অক্ষরে, পূর্ণ ভক্তিভরে।
উৎসবের শুভ উদ্বোধন করবেন পর্তুগালে ভারতের রাষ্ট্রদূত পুণীত রায় কুন্দল ও তাঁর স্ত্রী অরুন্ধতীবিশ্বাস কুন্দল।
এ বছর যাত্রা সহজ ছিল না। গত তিন বছর যে ‘আরারয়োস কালচারাল মার্কেট হল’ ছিল আমাদের প্রিয় আশ্রয়, আজ তা সংস্কারের জন্য বন্ধ। তবুও আমরা থেমে যাইনি। নতুন আশ্রয় খোঁজার পথ ছিল ভীষণ কঠিন। তবুও, অগাধ ভক্তি ও ভালবাসা নিয়ে আমরা খুঁজে পেয়েছি এক নতুন ঠিকানা, যেখানে রয়েছে পুজোর জন্য ছোট্ট সুন্দর হলঘর, আর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য খোলা আকাশের নীচে মুক্ত মঞ্চ। চারপাশে রঙিন দোকান—খাবার, পোশাক, গয়না, মেহেন্দি— সব মিলিয়ে যেন লিসবনের বুকে উঠে আসবে এক ছোট্ট শারদীয়া মেলা।
এ উৎসবের আসর কেবল বাঙালিদের নয়। হাত মিলিয়েছেন অ-বাঙালি ভারতীয়রাও। এমনকি পর্তুগিজ় ও অন্যান্য দেশের মানুষও এই উৎসবে শামিল হয়। এ যেন এক অন্তর্দেশীয় মিলনমেলা, যেখানে ভালবাসা ও সংস্কৃতি ছাপিয়ে যায় ভাষার ভেদরেখা।
২০২৫ সাল ভারত ও পর্তুগাল উদযাপন করছে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী। এপ্রিল মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু লিসবন সফরে দুই দেশের বন্ধনকে আরও গাঢ় করেছেন। সেই বন্ধনে উষ্ণতার নতুন অধ্যায় যোগ করবে এই দুর্গোৎসব।
গত তিন বছরের মতো এ বারও প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের দুর্গাপুজো পত্রিকা ‘উৎসব’। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণ—আমাদের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের হৃদয়ের রঙে আঁকা এই সঙ্কলন হবে মৈত্রীর আর এক অমলিন দলিল। গত বছর থেকে লিসবনে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা এনে পুজোর আয়োজন করছেন। কারণ দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়। এটি হল সহ-অস্তিত্বের গান, মিলনের নৃত্য, সম্পর্কের উৎসব। এখানে মিলেমিশে যায় ঢাকের তালে প্রবাসী বাঙালির সুর, ভারতীয় প্রবাসীদের টান, পর্তুগিজ়দের হাসি, আর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষের আনন্দধ্বনি।
লিসবনের দুর্গোৎসব তাই এক সেতুবন্ধন— মানুষে মানুষে, সংস্কৃতিতে সংস্কৃতিতে, আর দু’টি দেশের হৃদয়ের মধ্যে। মায়ের আগমনী হাওয়া বয়ে আনে শুধু ভক্তির উচ্ছ্বাস নয়, আনে সম্পর্কের অটুটবন্ধনের বার্তা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)