E-Paper

রঙিন ফুলের গালিচা বিছিয়ে প্রস্তুত ব্যারি

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহর থেকে দীর্ঘদিনের পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্য মেনে ১৪২৭-এর শরতে এই দুর্গোৎসবের সূচনা হয়েছিল। কুমোরটুলি থেকে এসেছিলেন সপরিবার মা দুর্গা।

শাশ্বতী নন্দী

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৩
ব্যারি শহরে পাণ্ডাবাড়ির সর্বজনীন দুর্গোৎসব। পাঁচ বছরে অনেক স্থানীয় প্রতিবেশী ভারতীয় উৎসবটিকে চিনে গিয়েছেন।

ব্যারি শহরে পাণ্ডাবাড়ির সর্বজনীন দুর্গোৎসব। পাঁচ বছরে অনেক স্থানীয় প্রতিবেশী ভারতীয় উৎসবটিকে চিনে গিয়েছেন। —নিজস্ব চিত্র।

এ বার পাঁচ বছরে পড়ল ব্যারি শহরে পাণ্ডাবাড়ির সর্বজনীন দুর্গোৎসব। টরন্টো ও গ্রেটার টরন্টো মিলিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, কালীবাড়ি, বঙ্গ পরিবার, আমার পুজো আর আগমনী-র দুর্গাপুজো হলেও, টরন্টো থেকে ব্যারি এই ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনও পুজো এই পাঁচ বছরে গড়ে ওঠেনি।

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহর থেকে দীর্ঘদিনের পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্য মেনে ১৪২৭-এর শরতে এই দুর্গোৎসবের সূচনা হয়েছিল। কুমোরটুলি থেকে এসেছিলেন সপরিবার মা দুর্গা। বাংলার শাড়ি-ধুতি-পাঞ্জাবি, বাংলার ঢাক, শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠ, কলাবউ, বোধন থেকে সিঁদুর খেলা, সন্ধ্যারতি, সন্ধিপুজো, ধুনুচি নাচ আর জমিয়ে বসে খিচুড়ি-পায়েস প্রসাদ সব কিছুই রয়েছে এই পুজোয়। বিদেশের অধিকাংশ জায়গায় প্রচলিত সপ্তাহান্তিক পুজো নয়, এখানে তিথি-নক্ষত্র মেনে পুজো হয় পাঁচ দিন ধরে।

পারিবারিক পুজো হলেও ব্যারি ও আশপাশের শহরে বসবাসকারী অনেক বাঙালি ও ভারতীয় পরিবার এবং প্রতি বছর নতুন করে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যারি অঞ্চলে আসা ছাত্রছাত্রীরা এই পুজোর সঙ্গে এক সুতোয় জড়িয়ে গিয়েছেন। কানাডার অন্য প্রান্ত, এমনকি আমেরিকায় থাকা কিছু বন্ধু ও স্বজনও পুজোর এই কয়েক দিন এখানে চলে আসেন, প্রবাসে এ যেন তাঁদের ঘরে ফেরা।

পাঁচ বছরের যাত্রাপথে অনেক স্থানীয় প্রতিবেশীও এই ভারতীয় উৎসবটিকে চিনে গিয়েছেন, ভালবাসতে শুরু করেছেন। তাঁরাও কেউ কেউ পুজোর মাঝে পুষ্পাঞ্জলির উপকরণ সাজান, ভোগপ্রসাদ গ্রহণ করেন। ব্যারির এমপি, অন্টারিও প্রদেশের এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) এবং স্থানীয় আধিকারিকরাও অনেকে আসেন এই পুজোয়। অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার বা মুখ্যমন্ত্রী এ বার ব্যক্তিগত পত্র পাঠিয়ে পাঁচ বছরের এই দুর্গোৎসবকে কানাডার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ঐক্যবন্ধনের সেতু ও একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ব্যারির এমপিও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে পুজোর সাফল্য কামনা করেছেন।

উপস্থিত আত্মীয়-অভ্যাগতরাই এই পুজোর সর্বজনীন পরিবার। পুজোর আয়োজন, ভোগপ্রসাদ বিতরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিকগুলো সবাই মিলে সামলান। গৃহকর্তা নিজেই পূজারী, গৃহকর্ত্রী মায়ের মূর্তির পেছনের দৃশ্যপট, মঞ্চসজ্জা, অলংকরণ সব নিজের হাতে প্রতি বছর আলাদা আলাদা শৈল্পিক সুষমায় ভরিয়ে তোলেন। এ বার পুজোর সুন্দর তোরণটি গড়ে দিয়েছেন প্রবাসী এক শিল্পী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছোটো ঘরোয়া ভাবে শুরু হয়েছিল, জনসমাগমের সঙ্গে সঙ্গে তারা বৈচিত্র আর সংখ্যায় বেড়েছে। গত বছর আবার কলকাতা থেকে এসেছে লক্ষ্মীপ্রতিমা, শুরু হয়েছে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।

ব্যারি শহর শরতের নীল আকাশ আর রঙিন ফুলের গালিচায় সেজে উঠেছে। সারা বছর অপেক্ষার প্রহর শেষে বেজে উঠবে সমবেত সুর, ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy