আট দিন ধরে চলছে ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ। এখনও সংযমের লক্ষণ নেই! এ ভাবে যদি মাসখানেক যুদ্ধ চলে, তা হলে ইজ়রায়েলের কোষাগারে বেশ চাপ পড়বে বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, এখন যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ, তা টেনেটুনে বড়জোর দু’সপ্তাহ চলতে পারে।
মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনীতিবিদদের দাবি, ইরানের সঙ্গে লড়াই যদি এক সপ্তাহ চলে বা বড়জোর দু’সপ্তাহ, যুদ্ধের খরচ নিয়ে খুব বেশি ভাবিত হবে না ইজ়রায়েল। কিন্তু তার বেশি হলেই কোষাগারের চাপ সামাল দেওয়া মুশকিল হবে। অর্থনীতিবিদদের দাবি, যুদ্ধ যদি এক মাস চলে, ইজ়রায়েলকে প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ করতে হতে পারে। ভারতীয় মুদ্রায় তা প্রায় এক লক্ষ তিন হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের ২০ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ছ’লক্ষ ৮১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ভারত সরকার।
গত সপ্তাহে শুক্রবার ইরানের উপর হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। তার পর এই শুক্রবার পর্যন্ত ইজ়রায়েলে অন্তত ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইজ়রায়েল যে ‘ইন্টারসেপ্টর’ ব্যবহার করছে, তাতে দিনে এক কোটি থেকে ২০ কোটি ডলার খরচ হচ্ছে। বহু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারেনি ইজ়রায়েলি সেনা। সেই সব ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে তেল আভিভ-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের বহুতলগুলিতে। তাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করতে ভবিষ্যতে তাদের প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হবে ইজ়রায়েলের।
আরও পড়ুন:
-
খামেনেইকে হত্যা করা হলে কী হবে ইরানে? ইঙ্গিত দিয়ে রাখল রাশিয়া, তেহরানে জমানা বদলে সায় নেই মস্কোর
-
ট্রাম্প দু’সপ্তাহ সময় নেওয়ার পরই আসরে ইউরোপ, ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি
-
ইরানকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস পুরনো বন্ধুর! শুক্রবার প্রার্থনার পর দেশে জমায়েতের ডাক দিল তেহরান, কী বার্তা
ব্যাঙ্ক অফ ইজ়রায়েলের প্রাক্তন গর্ভনর কার্নিট ফ্লাগ মার্কিন সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘‘কত দিন ধরে যুদ্ধ চলবে, তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। এটা যদি এক সপ্তাহ, তা হলে বিষয়টা এক রকম। কিন্তু যদিও দু’সপ্তাহ বা এক মাসের হয়, তা হলে পরিস্থিতি বদলে যাবে।’’ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট বলছে, স্বল্প থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংস করতে ইজ়রায়েল ‘ডেভিডস স্লিং’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্যবস্থাকে এক বার সক্রিয় করলেই তার জন্য খরচ হয় প্রায় সাত লক্ষ ডলার।
তেল আভিভের ‘ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ়’-এর প্রবীণ গবেষক ইয়েহোশুয়া কালিস্কি সংবাদপত্রকে জানান, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইজ়রায়েলের ‘অ্যারো ৩’ ব্যবস্থা রয়েছে। তাতে প্রতি ‘ইন্টারসেপ্টর’ ব্যবহারে খরচ হয় চার কোটি মার্কিন ডলার। এ ছাড়াও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উড়ানেও প্রতি ঘণ্টার ১০ হাজার ডলার করে খরচ হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জ্বালানি এবং বোমার খরচ। ইজ়রায়েলের রেইখম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জ়ভি একস্টেইন বলেন, ‘‘গাজ়া বা হিজ়বুল্লার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যত খরচ হচ্ছিল, তার চেয়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে প্রতিদিন বেশি খরচ হচ্ছে ইজ়রায়েলের।’’