রক্তাক্ত: জঙ্গি হামলার পর পড়ে রয়েছে নিহতদের দেহ। উত্তর সিনাইয়ের আল রাওদাহ মসজিদে। এএফপি
সবে শেষ হয়েছিল শুক্রবারের প্রার্থনা। হঠাৎই বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা মসজিদ চত্বর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রার্থনা সেরে বাইরে বেরিয়ে আসা মানুষগুলোর উপর উড়ে এল ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। মিশরের উত্তর সিনাই উপদ্বীপের এল-আরিশ শহরের পশ্চিম প্রান্তে বিল আল-আবেদ গ্রামের আল রাওদাহ মসজিদে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৩৫ জনের। দেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা মেনা জানাচ্ছে, আহত শতাধিক।
কপটিক গির্জা আর নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা সিনাই উপদ্বীপের প্রায় রোজকার ছবি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কোনও মসজিদে এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়নি। গোটা মিশরে শেষ এত ভয়াবহ হামলা কবে হয়েছে, তা-ও মনে করতে পারছেন না কেউ। হামলার খবর পেয়ে গোটা উপদ্বীপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডাকেন দেশের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কায়রো বিমানবন্দরেরও।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, আল রাওদাহ একটি সুফি মসজিদ। মূলত সুফি ভক্তেরাই এই মসজিদে নমাজ পড়তে আসেন। ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস আবার এই সুফিদের ধর্মত্যাগী বলে মনে করে। যদিও কোনও জঙ্গি সংগঠন এখনও পর্যন্ত আজকের হামলার দায় স্বীকার করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, শুক্রবারের জন্য আজ মসজিদে ভিড় যথেষ্ট বেশিই ছিল। প্রার্থনা শেষে বেশির ভাগ ভক্ত যখন মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন আচমকা বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরণ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগে শুরু হয় ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বর্ষণও। মুহূর্তে পাল্টে যায় চারপাশের পরিবেশ। হামলার আতঙ্কে তখন শুরু হয় হুড়োহুড়ি আর আর্তনাদ। পুলিশের বক্তব্য, আজ প্রার্থনা করতে আসা ভক্তদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য ছিলেন। জঙ্গিরা তাঁদেরই মূলত নিশানা করেছে।
আরও পড়ুন: এল চতুর্থ বার্ষিকী, হল না মহানায়িকার স্মৃতিসৌধ
হামলার খবর পেয়ে অন্তত তিরিশটি অ্যাম্বুল্যান্স আহতদের হাসপাতালে পৌঁছতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু জঙ্গিরা সেই অ্যাম্বুল্যান্স লক্ষ করেও গুলি চালাতে থাকে। ঘটনার কিছু ক্ষণ পরে মসজিদ চত্বরে গিয়ে দেখা গিয়েছে কম্বলে জড়ানো লাশের স্তূপ। মসজিদের সাদা মেঝেয় চাপ চাপ রক্ত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের একটি দলের গুলির লড়াই চলেছে দীর্ঘক্ষণ।
কোনও জঙ্গি সংগঠন মিশরে সাম্প্রতিক কালের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’ এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও সন্দেহের আঙুল আইএস সমর্থিত স্থানীয় উইলায়াত সিনাইয়ের দিকে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সিকে সরিয়ে মিশরে ক্ষমতায় আসে সেনা। নিষিদ্ধ করা হয় মুসলিম ব্রাদারহুডকে। তৎকালীন মিশরীয় সেনাপ্রধান সিসি-ই তার পর থেকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদ সামলাচ্ছেন। আর গত চার বছরে সন্ত্রাসের নিশানা করা হয়েছে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। দেশের মধ্যে সবচেয়ে জঙ্গি উপদ্রুত এলাকা এই সিনাই উপদ্বীপই। ২০১৪ সালে সিনাইয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ৩১ জন সেনার মৃত্যুর পরে গোটা উপদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট সিসি। প্রতিশ্রুতি দেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। তার পরেও বারবার জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন এখানকার মানুষ।
আজকের হামলার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লিখেছেন, ‘‘মিশরে প্রার্থনা করতে আসা নিরীহ মানুষদের উপর কাপুরুষের মতো হামলা। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদকে বরদাস্ত করবে না। সামরিক ভাবে ওদের নিকেশ করতে হবে। শেষ করে দিতে হবে সন্ত্রাসবাদী আদর্শ।’’ হামলার কড়া নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy