Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Covid Infection

কোভিড জয় করে ১১৮তম জন্মদিনও পালন করলেন ফ্রান্সের সিস্টার আন্দ্রেঁ

রয়টার্স জানাচ্ছে, ফরাসি ‘নান’ সিস্টার আন্দ্রেঁর জন্ম হয়েছিল ১৯০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।

ফরাসি ‘নান’ সিস্টার আন্দ্রেঁ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

ফরাসি ‘নান’ সিস্টার আন্দ্রেঁ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:১৩
Share: Save:

ইউরোপ মহাদেশের সেই সবচেয়ে প্রবীণ আর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রবীণতম ফ্রান্সের লুসিল র‌্যান্ডন (অন্য নাম- সিস্টার আন্দ্রেঁ) কোভিড সংক্রমণ কাটিয়ে উঠলেন। এমনকি, চলতি সপ্তাহে তাঁর ১১৮তম জন্মদিনটিও ধূমধাম করেই পালন করলেন তাঁর পরিচিতরা।

সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ফরাসি ‘নান’ সিস্টার আন্দ্রেঁর জন্ম ১৯০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। অসুস্থ হওয়ায় তোলোঁয় একটি নার্সিংহোমে গত ১৬ জানুয়ারি রক্তপরীক্ষা করানো হয় সিস্টার আন্দ্রেঁর। তিনি কোভিড পজিটিভ হন। তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই সময়েই নার্সদের বলেছিলেন, ‘‘আমি তো কিছু বুঝতেই পারছি না। আমার কি কিছু হয়েছে?’’ কোনও প্রাথমিক উপসর্গ ছিল না সিস্টার আন্দ্রেঁর।

ইউরোপে অতিমারির সেই গোড়ার পর্বে প্রবীণদের নিয়েই ছিল সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ, আশঙ্কা। নানা রকমের কো-মর্বিডিটির জন্য ইউরোপে তখন প্রবীণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন কোভিডে। করোনা-হানায় মৃত্যুর নিরিখেও তরুণতরদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন প্রবীণরা।

নার্সিংহোমে নিয়মিত কাগজ পড়তেন। টিভি দেখতেন। নার্সিংহোমে থাকতে থাকতেই সিস্টার আন্দ্রেঁ খবর পেলেন প্রবীণদের জন্য যে হোমে তাঁর সঙ্গে থাকতেন ৮৮ জন তাঁদের মধ্যে ৮১ জনই কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন। পরে খবর পেলেন তাঁদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুও হয়েছে। তবু নিজেকে নিয়ে কোনও হেলদোলই ছিল না সিস্টার আন্দ্রেঁর। বরং নার্সিংহোমের অন্য রোগীর খোঁজখবর নিতেন নার্সদের কাছে। পরিচিতরা কে কেমন আছেন জানতে চাইতেন।

হোম থেকে অনেকেই নার্সিংহোমে দেখতে য‌েতেন সিস্টার আন্দ্রেঁকে। হোমের মুখপাত্র ডেভিড তাবেল্লা বলেছেন, ‘‘দেখেছি মৃত্যুকে ভয়ই পেতেন না উনি। শুধু জানতে চাইতেন কী কী খাবার দেবে? সেগুলি পরে বদলাবে কি? আক্ষেপ করতেন রাতে বড় তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হচ্ছে। হোমের অন্যদের খবরাখবর নিতেন।’’

ক’দিন আগে হোমে পালন করা হল সিস্টার আন্দ্রেঁর ১১৮তম জন্মদিন। সেই সময়ই স্থানীয় সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘‘মৃত্যভয়কে জয় করেছিলেন কী ভাবে?’’ আন্দ্রেঁ জবাব দেন, ‘‘কোনও দিনই তো মৃত্যুভয় পাইনি। তাই কোভিডে মারা যেতেও ভয় পাইনি। যিশুর নাম জপিনি। ভালই আছি। তবে সব সময় অপেক্ষা করি থাকি কবে ও-পারে যাব। মরণের পারে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকি। গেলেই যে দাদা, দাদু, ঠাকুমার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যাবে।’’

জেরোন্টোলজি রিসার্চ গ্রুপের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১১৭ বছর বয়সি সিস্টার আন্দ্রেঁ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রবীণতম। তাঁর আগে এক জনই রয়েছেন। জাপানের কানে তানাকা। এক বছরের বড়। ইউরোপে সিস্টার আন্দ্রেঁর চেয়ে বেশি বয়সের আর কেউ জীবিত নেই।

শুধুই কি কপালজোরে কোভিড সংক্রমণ কাটিয়ে বেঁচে ফিরেছেন সিস্টার আন্দ্রেঁ? নাকি এর পিছনে বিজ্ঞান রয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যাঁরা ‘সুপারসেঞ্চুরিয়ান’ (যাঁদের বয়স ১১০ বছর তার চেয়েও বেশি), তাঁদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ঘাতক কোষের সংখ্যা তুলনায় কম বয়সিদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। সেই ঘাতক কোষগুলিই যে কোনও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। এই কোষগুলিকে বলা হয় ‘টি হেল্পার সেল’। গত বছর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস (পিনাস)’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানায় তরুণদের ক্ষেত্রে এই টি হেল্পার সেলগুলি যেখানে মাত্র ২.৮ শতাংশ থাকে, সে ক্ষেত্রে তা ১১০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় থাকে কম করে ২৫ শতাংশ।

মনের জোর নাকি টি হেল্পার সেলের ‘হেল্প’, কে জিতিয়ে দিল তাঁকে সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য দেননি সিস্টার আন্দ্রেঁ। শুধুই স্মিত হেসেছেন তাঁর ১১৮তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Infection COVID-19 Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE