E-Paper

তেনজিং-হিলারির উত্তরসূরিদের সঙ্গে উদ্‌যাপন এভারেস্ট দিবস

সোমবার ৭০তম এভারেস্ট দিবস উপলক্ষে নেপালের নামচেবাজারের অনুষ্ঠানে এই গল্প যখন শোনাচ্ছিলেন হিলারি-পুত্র পিটার, তখন দুপুর একটা ৫০ মিনিট। ৭০ বছর আগে ঠিক এই সময়ে ওই দু’জন আরোহীর মনে ঠিক কী চলছিল?

সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ০৬:৫২
An image of the mountaineers

এডমন্ড হিলারির পুত্র, পৌত্র এবং তেনজিং নোরগের পুত্র, পৌত্রীর সঙ্গে সত্যরূপ (মাঝে)। সোমবার, নেপালের নামচেবাজারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। ছবি: সমাজমাধ্যম।

স্থির ছিল, বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছতে পারলে সেখানে রেখে আসবেন একটি স্লিপিং ব্যাগ, যাতে নীচে থেকে তা দেখতে পেয়ে সামিট হয়েছে বোঝা যায়। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে নীচ থেকে কিছুই দেখা যায়নি। ৭০ বছর আগে, ১৯৫৩ সালের ২৯ মে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি সামিটে পৌঁছলেও তা জানা যায় পরের দিন বিকেলে, যখন তাঁরা সাউথ কলের ক্যাম্পে নেমে আসেন।

সোমবার ৭০তম এভারেস্ট দিবস উপলক্ষে নেপালের নামচেবাজারের অনুষ্ঠানে এই গল্প যখন শোনাচ্ছিলেন হিলারি-পুত্র পিটার, তখন দুপুর একটা ৫০ মিনিট। ৭০ বছর আগে ঠিক এই সময়ে ওই দু’জন আরোহীর মনে ঠিক কী চলছিল? আমরা শুধু তা অনুমানই করতে পারি।

তবে সে দিন থেকে নেপালের পাহাড় আর তার লোকজনের জন্য নিরলস কাজ করে গিয়েছেন তেনজিং-হিলারি। সেই ধারা বজায় রেখেছেন তাঁদের ছেলে জামলিং-পিটারও।প্রথম এভারেস্ট আরোহণের ৭০তম পূর্তি উপলক্ষে সোমবার নামচেবাজারের অনুষ্ঠানে তাই পরবর্তী প্রজন্মকে পাহাড়ের কাছে নিয়ে এসেছেন তাঁরা। পিটার আমায় বললেন, ‘‘বাবাও ছোটবেলায় পাহাড়ে নিয়ে যেতেন, পাহাড়ের, পাহাড়ি লোকেদের গল্প বলতেন। আমার ছেলেমেয়েদেরও তা-ই করেছি। সকালে আমার ছেলে আলেকজান্ডার গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল। সেখানে স্থানীয়েরা ওকে যে ভাবে আপন করে নিয়েছেন, তাতে ও খুব খুশি। ভবিষ্যতে নেপালের পাহাড় ও পাহাড়িদের উন্নয়ন, পরিবেশ নিয়ে ও কাজ করতে চায়।’’

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৯ জন বিভিন্ন পেশার মানুষজন ও ১৭-১৮ জন বন্ধুদের নিয়ে এভারেস্ট বেসক্যাম্প ট্রেক করতে এসেছিলাম। সকলে কাঠমান্ডু ফিরে গেলেও আমি রয়ে গিয়েছিলাম নামচেবাজারে, যাতে এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারি। ২৬ মে লুকলা বিমানবন্দরে তেনজিং-হিলারির জোড়া মূর্তির উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার নামচেবাজার থেকে কিছুটা উপরে উঠে খুন্দে গ্রামের হাসপাতালে একটি ডেন্টাল ক্লিনিকের উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ওই হাসপাতালটি। পড়শি গ্রাম খুনজুমে একদা স্কুল তৈরি করেছিলেন হিলারি। সেখানে রবিবার পড়ুয়াদের নাচগানের অনুষ্ঠানে সপরিবারে হাজির ছিলেন পিটার। সোমবার নামচেবাজারে তেনজিং নোরগে শেরপা হেরিটেজ সেন্টারের উদ্বোধন করলেন দার্জিলিংবাসী জামলিং। পর্বতারোহণের বহু দুর্মূল্য জিনিসপত্রে ঠাসা ওই সংগ্রহশালাটি এত দিন অনাদরে পড়ে ছিল। যৌথ ভাবে সেটি সংরক্ষণের কাজ করেছেন জামলিং ও তেনজিং নোরগে ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে বাবার পাশে দাঁড়ায়ে জামলিংয়ের ছোট মেয়ে বললেন, ‘‘পাহাড়ে ফিরতে পেরে আমি খুশি। বাবা-ঠাকুর্দাও এটাই চেয়েছিলেন।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ইটালির বিখ্যাত পর্বতারোহী রেনহোল্ড মেসনার। সামনে দাঁড়িয়ে ছবি-ভিডিয়ো তুলতে তুলতে হঠাৎ পিছন ফিরে দেখি, মেসনার দাঁড়িয়ে! মঞ্চে ওঠেননি, কোনও কথাও তেমন বলেননি। কিছু ক্ষণ পরেই দেখি, চলে যাচ্ছেন। এক দৌড়ে গিয়ে এভারেস্ট দিবস উপলক্ষে তৈরি বিশেষ রুপোর কয়েনটি ওঁর হাতে দিতে পেরেছি।

অনুষ্ঠানে অবশ্যই উঠল এভারেস্ট-পর্যটনের প্রসঙ্গ। আর্জেন্টিনার প্রথম এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী টমি হেনরিচ এর জন্য দুষেছেন ‘শখের’ পর্বতারোহীদের। সাফ জানালেন, তাঁরা যথেষ্ট প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ না নিয়ে স্রেফ এভারেস্ট ঘুরতে এসে সকলের বিপদ বাড়াচ্ছেন।

স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও দেখলাম এভারেস্ট দিবস নিয়ে প্রবল উত্তেজনা। হবে না-ই বা কেন! তেনজিং-হিলারির জন্যেই তো নেপালে পর্যটনের এত রমরমা, দেশবিদেশ থেকে স্বাস্থ্য-শিক্ষার প্রসারে আর্থিক সাহায্য আসছে। তবু এখানে দাঁড়িয়ে মনে হল, এখনও আমরা তেনজিংকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্ন দিতে পারিনি। আজও আমার দেশ ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে বেরোতে পারল না।

অনুলিখন: স্বাতী মল্লিক

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mountaineers Mount Everest Everest Climbers Tenzing Norgay edmund hillary

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy