বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতা-বিরোধী অপরাধ মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হল আজ। দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষ্য দেন খোকনচন্দ্র বর্মণ নামে এক মাইক্রোবাসচালক।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সমাবেশ এবং শাহবাগে বিএনপি-র ছাত্র সংগঠনের সমাবেশের জেরে সরগরম ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। এনসিপি আজকের সমাবেশ থেকে ২৪ দফা ইস্তাহার ঘোষণা করেছে। আর বিএনপি-র সভা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ব্রিটেন থেকে দেশে ফিরে আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় হাসিনার বিরুদ্ধে আজ প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল সাক্ষ্য পর্ব। সাক্ষ্য হিসেবে জবানবন্দিতে খোকনচন্দ্র বলেন, ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি তার চোখ, নাক ও মুখে লাগে। এ সময় তিনি মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তার বাঁ চোখ, নাক ও মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, যাত্রাবাড়িতে তাঁরা যখন পৌঁছেছিলেন তখন পুলিশ তাঁদের উপরে গুলি চালিয়েছিল। সেই সময় সেনাবাহিনী এসে ফাঁকা গুলি করে এবং পুলিশকে থানায় চলে যেতে বলে। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ শুনতে পাই- শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তখন সেখান থেকে সেনাবাহিনীও চলে যায়। সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর থানা থেকে পুলিশ বেরিয়ে এসে ‘পাখি মারার মতো’ গুলি করতে থাকে। তখন যে যেখানে পেরেছেন আশ্রয় নিয়েছেন।’’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন দমনে অপরাধের প্রমাণ এতটাই স্পষ্ট ও শক্তিশালী যে, বিচারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।’’
শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিয়ে গত বছরের ৩ অগস্ট শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নেতৃত্ব। এনসিপি-র এক মাসব্যাপী ‘জুলাই পদযাত্রা’ আজ শেষ হল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে। সেখানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা দায় ও দরদের রাজনীতির ঘোষণা করেছিলাম, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ঘোষণা করেছিলাম। বলেছিলাম এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনওই ফিরে আসতে পারবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জুলাই পদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বলেছিলাম ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিলোপ ঘটাতে পারিনি।’’ এরপর তিনি এনসিপি-র ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শীর্ষক ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
আজ শাহবাগে বিএনপি-র ছাত্র সংগঠনের সমাবেশ ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘আমাদের সামনে এখন লড়াই হল বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। দেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। তার আগে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দেশে ফিরবেন। উনি আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, আমাদের পথ দেখাবেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)