আলান হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল পাঁচ দিনের এই শিশু।
কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট একটা পুঁটলি মতো। তার ভিতর থেকেই উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট একরত্তি মুখ। চোখ দুটো আলতো ভাবে খোলা। ফোলানো ঠোঁটে কান্নার ভাব স্পষ্ট। এক উপকূলরক্ষীর হাত থেকে পুঁটলিটি অতি যত্নে নেওয়ার সময়ে থর থর করে কাঁপছিল শরণার্থী বাবার হাত। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে তখন তাঁর দু’চোখ থেকে গড়াচ্ছে জল। দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট চেপে রেখে লুকোচ্ছেন সে কান্না। পাঁচ দিনের সদ্যোজাত সন্তানকে ফের যে কোলে তুলে নিতে পারবেন, সেই আশাই তো ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি!
উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছিল শরণার্থীদের একটা বড় দল। বেশির ভাগই ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়ার বাসিন্দা। সেই দলেই ছিল ওই সদ্যোজাতের পরিবার। পাঁচ দিনের ওই শিশুকে নিয়েই ভিন্দেশে আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। সঙ্গে যমজ দুই দাদাও।
বাবার কোলে পাঁচ দিনের সেই একরত্তি শিশু। ছবি’ এপি।
কাঠের যে নৌকায় করে তাঁরা ইউরোপের দিকে সমুদ্র বেয়ে এগোচ্ছিলেন, তাতে অনেক বেশি লোক উঠে পড়েছিল। কোনও মতে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই লিবিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা নৌকাটির জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। হঠাত্ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকলে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। হাল্কা হুড়োহুড়িও শুরু হয়। নৌকা দুলতে থাকে।
সেই সময়েই দূরে ইতালীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর উদ্ধারকারী নৌকা নজরে আসে সকলের। প্রাণ বাঁচাতে এর পরেই হুড়োহুড়ির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ভূমধ্যসাগরের জলে ঝাঁপ দিতেও অনেকে দ্বিধা করেননি। মাঝ সমুদ্র থেকেই প্রায় দু’হাজার শরণার্থীদের উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে প্রচুর শিশুও ছিল। ছিল পাঁচ দিনের ওই শিশুটি, তার দাদা-মা-বাবাও। সদ্যোজাত শিশুটিকে তার বাবার হাতে তুলে দেন উদ্ধারকারী বাহিনীর সদস্যেরা। তার মা ও যমজ দাদাদের চিকিত্সার জন্য উড়িয়ে আনা হয় ইতালিতে।
সমুদ্র সৈকতে মুখ গুঁজে পড়ে আছে আলানের দেহ।— ফাইল চিত্র।
ঠিক এ ভাবেই আবদুল্লা কুর্দি তাঁর পরিবার নিয়ে সিরিয়া থেকে ইউরোপ যাচ্ছিলেন নৌকায়। পথে হঠাত্ই সেই নৌকা দুলে ওঠে বিপজ্জনক ভাবে। সঙ্গে বড় বড় ঢেউ। নৌকা ডুবতে থাকে। সেই সময়ে স্ত্রীর হাতটা শক্ত করে ধরতে গিয়ে আবদুল্লার হাতের ফাঁক গলে তাঁর বাচ্চা দুটো পড়ে যায় ওই উথালপাথাল সমুদ্রে। পরে দিনের আলো ফুটলে তুরস্কের বদরামের সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার ছোট ছেলে আলানের দেহ। একরত্তি দেহটা সমুদ্র বেয়ে ভেসে এসেছিল তুরস্কে। বালির মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা আলানের সেই ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। উদ্ধারকারীদের দৌলতে এ বার অন্তত সেই ছবি দেখতে হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy