বিধ্বংসী: দাবানল চিলিতে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এলাকা ছাড়তে ভরসা ঘোড়াও। ছবি: পিটিআই।
মধ্য চিলির শান্ত সৈকত শহর ভিনিয়া দেল মার। এখানকার বিখ্যাত মিউজ়িক ফেস্টিভ্যালের সময় ছাড়াও সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকে। সম্প্রতি চিলির সেই শান্ত শহর জ্বলছে দাবানলে।
গত দু’দিন ধরে দাবানল ছড়িয়েছে মধ্য চিলির ভালপারাইসো এলাকায়। সেই আগুন সর্বগ্রাসীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের শহরগুলিতে। ইতিমধ্যে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ক্যারোলিনা তোহা বলছিলেন, ‘‘রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা ৫টি দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পরেই বুঝেছিলাম আসলে সংখ্যাটা অনেক বেশি। এ বার তা হুহু করে বাড়তে চলেছে।’’
চিলিতে দাবানল নতুন কিছু নয়। ২০১৭ থেকে প্রায় প্রতি বছরই গরমের সময় কোথাও না কোথাও দাবানল লাগে। গত বছর দাবানলে মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। প্রায় ৪ লক্ষ হেক্টর জমি পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আগুন লেগেছে। কিন্তু এ বার দাবানল ছড়াচ্ছে অনেক দ্রুত গতিতে। মাত্র দু’দিনে ৩০ হাজার হেক্টর থেকে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ভয়াবহতা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
শুক্রবার ভিনিয়া দেল মারের বাড়িতে বসে টিভিতে দাবানলের খবর শুনছিলেন রডরিগো পুলগার। হঠাৎ খেয়াল করলেন, আগুন এসে পড়েছে তাঁর আশপাশের বাড়িতেও। আগুন থেকে বাঁচতে কাঠের ছাদে জল ছড়াতে শুরু করেন তিনি। তাতে নিজের বাড়িটি রক্ষা পেলেও সকলেই তাঁর মতো সৌভাগ্যবান নন। পুলগার জানান, এলাকায় প্রায় ১৩ হাজার প্রতিবেশী দাবানলের জেরে ছাদ হারিয়েছেন। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বহু বাড়ি।
খানিক দূরেই থাকেন ৬১ বছরের এল অলিভার। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের ছোট্ট শান্ত শহরটা নরক হয়ে গিয়েছে। পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছিল। আমি ওদের সাহায্য করছিলাম। কিন্তু তার পর আমার বাড়িতেও আগুন লাগল। গায়ের উপরে উড়ে এসে পড়ছিল গরম ছাই। এই এলাকায় বেশির ভাগই বয়স্ক লোকের বাস। প্রতিবেশী এক বৃদ্ধাকে আমরা বার করে আনতে পারলাম না। চোখের সামনে অগ্নিদগ্ধ বাড়িতেই মারা গেলেন তিনি।’’
ভালপারাইসোর বহু এলাকা এখন ঘন কালো ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা। তবে নিকটবর্তী বসতি এলাকাগুলি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। ট্রাক আর হেলিকপ্টারে করে দমকল বাহিনী উদ্ধার কাজে নেমেছে। চিলির প্রেসিডেন্ট এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।’’
চিলিতে দাবানলের প্রকোপ দিনে দিনে বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদেরাও। তাঁদের মতে, এ বছর এল নিনো, খরা আর তাপপ্রবাহের প্রভাবে দাবানল এত অল্প সময়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তা ছাড়া, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব তো আছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy