শিশু যৌনচক্রের মূল পান্ডা জেফ্রি এপস্টাইনের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ এনেছিলেন ভার্জিনিয়া জিফ্রে নামে এক নির্যাতিতা। চলতি বছরেই মৃত্যু হয় তাঁর। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ভার্জিনিয়ার লেখা একটি স্মৃতিকথা। যাতে উঠে এসেছে তাঁর আরও কিছু ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। বইটিতে ভার্জিনিয়া লিখে গিয়েছেন, কিশোরী অবস্থায় কোনও এক দেশের ক্ষমতাশালী ‘প্রধানমন্ত্রী’ তাঁর উপরে অকথ্য যৌন অত্যাচার চালিয়েছিলেন বহু বার। নিয়মিত মারধর, ধর্ষণ করা হত তাঁকে। অত্যাচারের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, তিনি এক সময়ে পালাতে বাধ্য হন ওই যৌনচক্র থেকে। এর পাশাপাশিই ব্রিটিশ পরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ এনেছিলেন ভার্জিনিয়া। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে শুক্রবার নিজের রাজ-উপাধি ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অ্যান্ড্রু।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আত্মঘাতী হন ৪১ বছরের ভার্জিনিয়া। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা স্মৃতিকথা, ‘নোবডিস গার্ল: আ মেমোয়ার অব সারভাইভিং অ্যাবিউজ় অ্যান্ড ফাইটিং ফর জাস্টিস’। বইটিতে নিজের কিশোরীবেলার নানা ভয়াবর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ভার্জিনিয়া। ২০০২ সালে যখন তাঁকে এপস্টাইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে আনা হয়েছিল, তখনও তিনি প্রাপ্তবয়স্ক নন। নাবালিকা অবস্থাতেও কী ভাবে দিনের পর দিন তাঁর উপরে অকথ্য অত্যাচার চালানো হত সেখানে, সে বিষয়েই নানা কথা লিখে গিয়েছেন তিনি।
ভার্জিনিয়ার স্মৃতিকথায় এক অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ‘প্রধানমন্ত্রীর’ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাম উল্লেখ না করায় পরিষ্কার ভাবে জানা যায়নি আদতে কার কথা বলতে চেয়েছেন ভার্জিনিয়া। এর আগে ভার্জিনিয়া একাধিক বার ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন প্রাক্তন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাকের বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগ মেনে নেননি বারাক। তবে স্মৃতিকথাতে বারাকের প্রসঙ্গই ভার্জিনিয়া টেনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভার্জিনিয়া আরও লিখেছেন, শিশু-কিশোরী বয়সে তাঁকে অন্তত তিন বার ধর্ষণ করেছিলেন ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু। এ কথা তিনি যাতে ফাঁস না করেন, সে জন্য নানা ভাবে হুমকিও দিতেন অ্যান্ড্রু। ২০২২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী জন্মদিন উদ্যাপনের আগে যাতে রাজপরিবারের ‘মর্যাদাহানি’ না হয়, তাই অন্তত এক বছরের জন্য মুখ বন্ধ রাখতে তাঁকে কার্যত বাধ্য করেছিলেন সদ্য খেতাব হারানো অ্যান্ড্রু। অভিযোগ, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য ভার্জিনিয়াকে কয়েক লক্ষ ডলারও দিয়েছিলেন সেই সময়ে।
বস্তুত শিশু, নাবালিকা নিগ্রহকারী তথা ধর্ষক হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত এপস্টাইনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল রাজকুমার অ্যান্ড্রু-সহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত নানা বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধে। তবে মুখে সব অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এলেও প্রবল চাপের মুখে পড়েই সম্ভবত শুক্রবার নিজের রাজ-উপাধি ত্যাগ করেন অ্যান্ড্রু।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)