E-Paper

বাংলাদেশে উচ্চ পদে প্রাক্তন কর্তারা, পুলিশের হাল ফেরেনি

পুলিশের সদর দফতর সূত্রের খবর, গত জুলাই-অগস্টের আন্দোলনে দেশে থানা-সহ পুলিশের ৪৬০টি পরিকাঠামোয় হামলা, অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুর হয়।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ ০৭:৪৫
৫ অগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে গণআদালত সংস্কৃতি চালু হয়েছে, কিছু মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, সাজা দিচ্ছেন, পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

৫ অগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে গণআদালত সংস্কৃতি চালু হয়েছে, কিছু মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, সাজা দিচ্ছেন, পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। —প্রতীকী চিত্র।

গত অগস্টে বাংলাদেশে পালাবদলের সময় থেকে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছিল পুলিশের অফিসার-কর্মীদের। প্রায় ১০ মাস কাটতে চলল, কিন্তু এখনও আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি সে দেশের পুলিশ। যার ফলে এখনও কার্যত আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে সেনাবাহিনী। ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেনার সাঁজোয়া গাড়ি।

পুলিশের সদর দফতর সূত্রের খবর, গত জুলাই-অগস্টের আন্দোলনে দেশে থানা-সহ পুলিশের ৪৬০টি পরিকাঠামোয় হামলা, অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুর হয়। পুলিশ, বিভিন্ন থানা ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছয় লক্ষ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়েছে। যার অধিকাংশ এখনও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ অফিসারদের একাংশের দাবি, ওই সময়ে অন্তত ৪৪ জন পুলিশকর্মী নিহত হয়েছেন, হাজারের বেশি আহত। গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেশ কিছু দিন থানাগুলি ছিল পুলিশ-শূন্য।

পুলিশের উপরে এই আক্রোশ কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, হাসিনা জমানায় পুলিশ আওয়ামী লীগের ‘দলদাসে’ পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের কথায়, ‘‘হাসিনা আমলে যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল, সেই কারচুপিতে পুলিশের একাংশের বড় ভূমিকা ছিল। তৎকালীন শাসকদলের অন্যায় নির্দেশ না মানলে যোগ্য অফিসারদের নিষ্ক্রিয় করে বা গুরুত্বহীন পদে বসিয়ে কোণঠাসা করা হয়েছিল।’’ তবে তিনি এ-ও বলছেন, শাসকদলের তল্পিবাহকের কাজ করেছে মুষ্টিমেয় কিছু পুলিশকর্তা। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে গোটা পুলিশবাহিনীকে।

সূত্রের খবর, হাসিনা সরকারের পতনের পর তার অনুগত শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জীবন প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান। ওই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক যোগ্য আধিকারিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে যে সব অফিসার সন্ত্রাস দমনে সরাসরি দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের কারও চাকরি গিয়েছে, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ আত্মগোপন করে রয়েছেন। কাউকে কাউকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। সার্বিক ভাবে পুলিশ বাহিনীতে হতাশা তৈরি হয়েছে, ভেঙে পড়ছে ‘চেন অব কমান্ড’ও।

এই পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আইজিপি পদে এক জন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারকে নিয়োগ করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়েছে প্রাক্তন এক জন অফিসারকে। কর্মরত অফিসারেরা তাঁদের নির্দেশকে তেমন আমল দিচ্ছেন না বলেই সূত্রের দাবি। আবার হাসিনা সরকারের আমলে যাঁদের পদোন্নতি হয়নি, তাঁরা এখন বড় পদে বসেছেন। কিন্তু মাঝের ১৫ বছর তাঁরা সক্রিয় ছিলেন না। এখন আর মাঠে নেমে কাজ করতে পারছেন না। মফস‌্সল এলাকার অনেক পুলিশ অফিসার পদোন্নতি পেয়ে রাজধানীর থানাগুলিতে এলেও তাঁরা রাজধানীর অপরাধের ধরন, অপরাধী কারা জানেন না। চেনেন না ঢাকার পথঘাটও।

এ ছাড়া, ৫ অগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে গণআদালত সংস্কৃতি চালু হয়েছে, কিছু মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, সাজা দিচ্ছেন, পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কারাগার থেকে অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধী বেরিয়ে গিয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক, ‘‘পুলিশের উপরে
আমজনতার বিতৃষ্ণা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে গত ৯ মাস পুলিশকে স্বমহিমায় ফেরানো যাবে না— এটা বিশ্বাস করা কঠিন। সম্ভবত সরকারই চায় না পুলিশের এই ভীতি কাটুক। কারণ, পুলিশ আত্মবিশ্বাসী হলে মব-কালচারের মতো জঘন্য বিষয়টি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Sheikh Hasina Muhammad Yunus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy