বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামিনের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে খবর, আগামী রবিবার ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার দুপুরেই বাংলাদেশের হাই কোর্টে জামিন পান চিন্ময়কৃষ্ণ। সে দেশের হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ চিন্ময়ের জামিন মামলায় রায় ঘোষণা করে। কিন্তু ওই জামিনের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয় সরকার পক্ষ। ‘প্রথম আলো’কে বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ জানান, জামিন স্থগিতের আবেদনটি ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। তবে শুনানি হয়নি। আগামী রবিবার মামলাটির শুনানিত হতে পারে বলে জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।
চিন্ময়ের জামিনের নির্দেশের পরেই তাঁর জেলমুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দুপুরে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি স্টার’কে আইনজীবী প্রহ্লাদ দেবনাথ জানিয়েছেন, হাই কোর্টের এই নির্দেশের পর চিন্ময়কৃষ্ণের জেলমুক্তি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়, তবে জেল থেকে এখনই তিনি ছাড়া পাবেন না। সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরকার পক্ষের আবেদনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত চিন্ময়ের জেলমুক্তির কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।
আরও পড়ুন:
চট্টগ্রামের এক স্থানীয় বিএনপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল চিন্ময়কৃষ্ণকে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বর থেকে প্রথমে তাঁকে আটক করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালতে পেশ করা হয়েছিল তাঁকে। ওই সময় চিন্ময়কে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রামের আদালত। সেই থেকে বাংলাদেশের জেলেই বন্দি থাকতে হয়েছে চিন্ময়কৃষ্ণকে। তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি অতীতে বিভিন্ন সময়ে পিছিয়ে গিয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে শুনানি থাকলেও কিছু কট্টরপন্থী সংগঠনের হুমকির জেরে চিন্ময়কৃষ্ণের পক্ষে কোনও আইনজীবী এজলাসে হাজির হতে পারেননি বলে অভিযোগ। তার পরে ২ জানুয়ারি চিন্ময়কৃষ্ণের জামিন মামলার শুনানি ছিল চট্টগ্রামের আদালতে। সে দিনও জামিনের আবেদন খারিজ হয়। পরে গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ইদের ছুটির পরে চিন্ময়কৃষ্ণের মামলাটি শুনানির জন্য উঠতে পারে। শেষে বুধবার চূড়ান্ত শুনানির পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়ের জামিন মঞ্জুর করে বাংলাদেশের হাই কোর্ট। কিন্তু সেই জামিন আটকাতে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার পক্ষ।
বস্তুত, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছিল। ওই আবহে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ধর্মীয় সংগঠন মিলে গঠন করে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’। ওই মিলিত মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র ছিলেন চিন্ময়কৃষ্ণ। তাঁর ডাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ আয়োজিত হয়। তাঁর গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।