E-Paper

শান্তি আসবে কি, সংশয়ে গাজ়ার বাসিন্দা দম্পতি

বছর সাতাশের আবদেল এবং হাদিল যুদ্ধের আগে গাজ়ায় ‘কনটেন্ট’ লেখক হিসেবে কাজ করতেন। ইংরেজিতে পোক্ত হওয়ায় অবসরে অনুবাদক এবং শিক্ষকতাও করতেন।

আরুণি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:২৯
ইজ়রায়েলি হানায় ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে থাকাকালিন আবদেল এবং হাদিল।

ইজ়রায়েলি হানায় ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে থাকাকালিন আবদেল এবং হাদিল। —নিজস্ব চিত্র।

হামাস যদি শেষ পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের শান্তি প্রস্তাব মেনে নেয়, তা হলে কি বদলাবে গাজ়ার জীবনযাত্রা?

আপাতত খুব একটা আশার আলো দেখছেন না গাজ়ার বাসিন্দা আবদেল রমহান এস জে আবু তাখিয়া এবং হাদিল কে এল সাবাখি। এই দম্পতির কথায়, শান্তি প্রস্তাব হামাস মেনে নিলে, যুদ্ধ বন্ধ হবে ঠিকই। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, অতীতেও যুদ্ধ বন্ধের বহু চেষ্টা হয়েছে, যেগুলির কোনওটাই ফলপ্রসূ হয়নি। এ ক্ষেত্রেও তারই পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সেটাই উদ্বেগের।

বছর সাতাশের আবদেল এবং হাদিল যুদ্ধের আগে গাজ়ায় ‘কনটেন্ট’ লেখক হিসেবে কাজ করতেন। ইংরেজিতে পোক্ত হওয়ায় অবসরে অনুবাদক এবং শিক্ষকতাও করতেন। শখ করে খুলেছিলেন ‘কনটেন্ট মার্কেটিং’এর ব্যবসাও। খান ইউনুস-সহ গাজ়ায় দু’টি অফিসও ছিল তাঁদের। যুদ্ধের জেরে সে সব এখন অতীত। বোমা আঘাতে অফিসও ধ্বংসস্তূপ। তবে বেঁচে গিয়েছে তাঁদের বসত বাড়িটা। দক্ষিণ গাজ়ায় থাকেন তাঁরা। যুদ্ধ শেষে গাজ়া ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে দম্পতির। আবদেল বলছিলেন, ‘‘গাজ়া এখন ধ্বংসস্তূপ। এখানকার মানুষদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। ভেবে রেখেছি যুদ্ধ থামলে, মিশরে যাওয়ার চেষ্টা করব। তার পর ইউরোপের কোনও দেশ, যেমন ইটালি, স্পেন কিংবা আয়ারল্যান্ড।’’

ইজ়রায়েলি হামলায় হাদিল হারিয়েছেন তাঁর প্রিয় কাকুকে। ধরা গলায় বলছিলেন, ‘‘২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওঁকে হারাই। খুব ভালবাসতাম মানুষটাকে!’’ যুদ্ধ থামলেও গাজ়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে ইজ়রায়েলি সেনা এবং আমেরিকার অঙ্গুলিহেলনে— এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। অন্য দিকে, গাজ়া ভূখণ্ডের অর্থনীতি মিশেছে ধুলোয়। বিপর্যস্ত ব্যাঙ্ক পরিষেবাও। নগদ জোগাড়ে ভরসা কেবল দালালেরা। হাদিল বলছিলেন, ‘‘সঞ্চয় এবং অনুদানের উপরই আমরা চলছি। এক মাস আগেও নগদ পেতে দালালদের ৫০ শতাংশ কমিশন দিতে হত। এখন তা কমে হয়েছে ৩৫ শতাংশ।’’ আকাশ ছুঁয়েছে নিত্যপণ্যের দরও। যুদ্ধের আগে এক লিটার দুধের দাম ছিল দু’ডলার (আমেরিকান), এখন তা আট ডলার। আগে এক কেজি গুঁড়ো দুধ মিলত ছ’ডলারে, এখন দর ২০ ডলার। সম্প্রতি একটা সাবানের দামও ছুঁয়েছিল পাঁচ ডলারের অঙ্ক। ব্যথা কমার ওষুধের দাম প্রায়দেড় ডলার।

হাদিল বলছিলেন, ‘‘গাজ়াবাসীকে একসঙ্গে দু’টো যুদ্ধ সামলাতে হচ্ছে। একটা গোটা দুনিয়া দেখতে পাচ্ছে, দ্বিতীয়টা পানীয় জল ও খাবার সংগ্রহের।’’ আবদেলের সংযোজন, ‘‘কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ে পানীয় জলের ট্রাক থেকে জল সংগ্রহ করতে না পারেন, তা হলে তাঁকে সারাদিন জলহীন কাটাতে হয়। কাজ নেই, তাই অধিকাংশ মানুষ ত্রাণের উপরই নির্ভরশীল। লড়াই করে তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। না হলে মরতে হচ্ছে।’’ যদিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হামাস বাহিনীর ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই ট্রাক লুটের ভিডিয়ো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে নিরুত্তর থাকেন তাঁরা। এমনকি, হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলি বন্দিকে দিয়ে কবর খোঁড়ানোর প্রশ্নেও নীরব আবদেল এবং হাদিল।

বিশ্বের কাছে আবদেল এবং হাদিলের বার্তা— গাজ়া ভূখণ্ডের প্রকৃত বাসিন্দা কারা, সেটা মাথায় রেখে পরিস্থিতি বিচার করা হোক। বলছিলেন, ‘‘যুদ্ধ আমরাও চাই না, বরং শান্তিতে বাঁচতে চাই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gaza Israel Hamas Conflict Donald Trump america Palestinians palestine

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy