Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
George Floyd

বিক্ষোভকারীদের জন্য দরজা খুলে দিলেন রাহুল

কার্ফু চালু হওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা আগেই পুলিশ অকারণে রাবার বুলেট আর পেপার স্প্রে দিয়ে হোয়াইট হাউসের চারপাশে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করেছে।

প্রায় ৭০ জনকে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, লঙ্কা গুঁড়োর স্প্রে-র হাত থেকে বাঁচিয়েছেন রাহুল দুবে।—ছবি সংগৃহীত।

প্রায় ৭০ জনকে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, লঙ্কা গুঁড়োর স্প্রে-র হাত থেকে বাঁচিয়েছেন রাহুল দুবে।—ছবি সংগৃহীত।

সুপ্রতিম সান্যাল
ওয়াশিংটন ডিসি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৪:৩০
Share: Save:

গত কয়েক দিন ধরে লাফিয়েত পার্ক-সহ শহরের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ভিড়। লুটপাটের গল্প নিয়ে সরগরম সংবাদমাধ্যম। কারা ভাঙচুর চালাচ্ছে? তারা কি বিক্ষোভকারী? নাকি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর করতে উস্কানি দিচ্ছে? যাই হোক না কেন, এই রকম তো চলতে দেওয়া যায় না। তাই পুলিশকে বলা হল, বিক্ষোভকারীদের উৎখাত করতেই হবে। সন্ধে ৭টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছিল আগেই।

গত সোমবারের কথা। রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, লঙ্কা গুঁড়োর স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করে আর গায়ের জোর খাটিয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আলাদা করে ডিসি-র সরু রাস্তাগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। ১৫ আর শন স্ট্রিটের মোড়ের কাছে থাকেন রাহুল দুবে। পুলিশ প্রায় ৭০ জনের একটি ছোট বিক্ষোভকারী দলকে তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘেরাও করে রেখেছিল। তাঁদের পালাবার জায়গা নেই। তাঁদের অনেকেই আহত। সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু।

রাহুল তাঁর বাড়ির দরজা খুলে দিলেন। বাড়িতে যা দুধ ছিল তা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের চোখ ধোওয়ানো হল। পাড়াপড়শিরা আরও দুধ নিয়ে এলেন। সারা রাত বিক্ষুব্ধদের দেখাশোনা করলেন ওই পাড়ার লোকেরা। সকাল ৬টা নাগাদ কার্ফু শেষ। বিক্ষোভকারীরা বাড়ি ফিরে গেলেন।

আরও পড়ুন: ‘আমার বাবা তো দুনিয়াই বদলে দিল!’ || মেয়েটা বড় হয়ে গেল আট দিনে

সবাই যে কার্ফু মানছেন তা নয়। গত দু’রাতেই দেখছি বেশ ভিড় রাস্তায়। ডিসি-র উপরে সামরিক কপ্টার চক্কর মারছে। খুব নীচ দিয়ে উড়ছে। হাওয়ায় ধুলো আর জঞ্জাল ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভকারীদের উপরে। শুনেছি, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ভয় পাওয়াতে এই রকম করা হয়। যদিও ভয় বিশেষ কেউ পেলেন না। অনেকেই আকাশের দিকে হাত মুঠো করে উঠে দাঁড়ালেন।

কার্ফু চালু হওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা আগেই পুলিশ অকারণে রাবার বুলেট আর পেপার স্প্রে দিয়ে হোয়াইট হাউসের চারপাশে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করেছে। এঁরা কিন্তু শান্তি বজায় রেখেছিলেন। লুটপাট চালাননি। ডিসি পুলিশ আক্রমণ করেনি। করেছে ফেডারেল পুলিশ। ডিসির মেয়র মুরিয়েল বোসার বলেই ফেললেন যে, এতে ডিসি পুলিশের কাজ আরও শক্ত হয়ে গেল। একটি ঐতিহাসিক গির্জার সামনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইবেল হাতে ছবি তুলতে চান। তাই তাঁর পথ পরিষ্কার করা হল।

এমনিতেই ডিসি-তে সব সময় কিছু না কিছু প্রতিবাদ চলছে। আমাদের কাছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ নতুন নয়। কিন্তু এ বার একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। মার্কিন গুপ্তচর বিভাগকে চোখ রাঙানোর মতো সাহস আগে দেখিনি।

গত চার মাসে এক লক্ষের বেশি মার্কিন নাগরিক করোনাভাইরাসের শিকার। আফ্রো-মার্কিন ও লাতিনোরাই বেশির ভাগ মারা গিয়েছেন। ফ্লয়েড যে খুন হয়েছেন, তা হেনেপিন কাউন্টির চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে ময়না-তদন্তের পরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের হাতে আফ্রো-আমেরিকানদের মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রায় চার বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস’ আন্দোলন। মার্কিন প্রেশার কুকারের ‘সেফটি ভালভ’ কি এ বার ফেটে যেতে চলেছে?

আজকের রাত গত কালের মতো শান্তিপূর্ণ থাকবে কি না, প্রশ্ন সেটাও।

(লেখক কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

George Floyd Death Protest Washington DC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE