চিতাতেই সব শেষ। এক বার প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেলে ধরাধামের মায়া ত্যাগ করা ছাড়া আর উপায় নেই। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?
জার্মানির এক সংস্থা নতুন সম্ভাবনার কথা বলছে। তারা মৃত্যুর পরেও মানুষকে ‘বেঁচে থাকা’র সুযোগ দিচ্ছে।
বিষয়টি কী?
জার্মানির ওই সংস্থার নাম ‘টুমরো বায়ো’। বার্লিনে তার সদর দফতর। এই সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এমিল কেন্ডজ়িয়োরা ক্যানসার গবেষক। বর্তমানে তিনি মৃতদেহ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করেন। তাঁর সংস্থার কাজও দেহ সংরক্ষণ। সংস্থাটি যে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর নিখুঁত ভাবে তাঁর দেহ সংরক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে দু’লক্ষ ডলারের বিনিময়ে, ভারতীয় মুদ্রায় যার আনুমানিক মূল্য ১.৭৪ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় জার্মান সংস্থা। দেহটিকে অত্যধিক নিম্ন তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যাতে অক্ষত থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হয়। তার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা, ওষুধপত্র এবং রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। এই লাশ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্রায়োপ্রিজ়ার্ভেশন। অতি দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, যাতে দেহের একটি কোষেও পচন না ধরে।
নিখুঁত ক্রায়োপ্রিজ়ার্ভেশনের জন্য সময় অত্যন্ত জরুরি। তাই জার্মান সংস্থাটি সবসময় একটি জরুরিকালীন দলকে তৈরি রাখে। যাঁরা দেহ সংরক্ষণ করতে চেয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর কয়েক মিনিটের মধ্যে দেহটি সংগ্রহ করে এই দল। দিনরাত তাদের সজাগ থাকতে হয়।
কিন্তু এ তো গেল দেহ সংরক্ষণের কথা। মৃতকে কী ভাবে ‘বাঁচিয়ে তোলা’ সম্ভব?
জার্মান সংস্থার বক্তব্য, মৃত্যুর পর আগামীর জন্য তারা দেহটিকে সংরক্ষণ করে রাখে। কারণ, তাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এমন কোনও প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হবে, যা মৃত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে। তা যদি হয়, তবে এই সংরক্ষিত দেহগুলিতে প্রাণ ফেরানো যাবে। নতুন করে বেঁচে উঠতে পারবেন এই ব্যক্তিরা। পাবেন দ্বিতীয় জীবন। বিবিসি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জার্মান সংস্থাটির প্রস্তাবে প্রায় ৭০০ জন ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তাঁরা এই সংরক্ষণ পরিষেবার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
জার্মান সংস্থা ক্রায়োপ্রিজ়ার্ভেশন প্রক্রিয়া তিন থেকে চার জন মানুষ এবং পাঁচটি পোষ্যের দেহে প্রয়োগ করেছে। আগামী দিনে আমেরিকাতেও এই পরিষেবা নিয়ে যেতে তারা আগ্রহী।
তবে বিজ্ঞান বলছে, মৃত ব্যক্তিকে জাগিয়ে তোলা অসম্ভব। এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। সম্ভাবনাও নেই। যদি কোনও সময়ে এই প্রক্রিয়া বাস্তবে সম্ভব হয়ও, সে ক্ষেত্রে বেঁচে ওঠা ব্যক্তির মস্তিষ্ক গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। এই গোটা প্রক্রিয়াকে ‘অযৌক্তিক’ বলেও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।