Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মানহানি করেছি রাজপরিবারের, স্বীকার অ্যান্ড্রুর

২০১৫ সালে ফ্লরিডার আদালতে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে চলা একটি মামলার সূত্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন ভার্জিনিয়া রবার্টস নামে এক মহিলা।

প্রিন্স অ্যান্ড্রু। —ফাইল চিত্র

প্রিন্স অ্যান্ড্রু। —ফাইল চিত্র

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৮
Share: Save:

এক দিকে তিনি প্রভাবশালী ধনকুবের। অন্য দিকে, নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, মেয়ে পাচার ও নারীঘটিত অন্যান্য কেচ্ছা ছিল তাঁর জীবনের নিত্যসঙ্গী। এ হেন জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুললেন ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু। ডিউক অব ইয়র্ক স্বীকার করে নিলেন, যা করেছেন তা উচিত হয়নি। তাঁর আচরণ রাজপরিবারের মুখ পুড়িয়েছে।

কী করেছেন অ্যান্ড্রু? ২০১৫ সালে ফ্লরিডার আদালতে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে চলা একটি মামলার সূত্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন ভার্জিনিয়া রবার্টস নামে এক মহিলা। যিনি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে তাঁকে তিন-তিন বার জোর করে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। এক বার লন্ডনে, এক বার নিউ ইয়র্কে ও এক বার এপস্টাইনের ব্যক্তিগত একটি ক্যারিবীয় দ্বীপে। ফ্লরিডার আইন অনুযায়ী সেই সময়ে ভার্জিনিয়া ছিলেন নাবালিকা। অভিযোগ, মার্কিন পুঁজিপতি এপস্টাইন দেশ-বিদেশের প্রভাবশালীদের হাতে রাখতে এ ভাবেই ‘যৌনদাসী’ জোগান দিতেন। ভার্জিনিয়ার কোমর জড়িয়ে অ্যান্ড্রুর ছবি প্রকাশ্যে আসায় সেই অভিযোগ পোক্ত হয়। এপস্টাইনের ম্যানহাটনের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে অ্যান্ড্রুর এক তরুণীর দিকে হাত নাড়ার ছবিও সেই সময়ে প্রকাশ হয়েছিল। কিছু মিলিয়ে রানির তৃতীয় সন্তানের বিরুদ্ধে ‘তথ্য-প্রমাণের’ অভাব ছিল না কখনও। ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কে এপস্টাইনের সঙ্গে তোলা অ্যান্ড্রুর একটি ছবি প্রকাশিত হয়। আর তার দু’বছর আগেই এক নাবালিকাকে প্রকাশ্যে যৌনবৃত্তিতে নামার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে জেল খেটেছেন এপস্টাইন। এ হেন ‘কুখ্যাত’ ব্যক্তির সঙ্গে রাজকুমারের ঘনিষ্ঠতা কোনও দিন স্বীকার করেনি পরিবার। অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন অ্যান্ড্রু নিজেই। এপস্টাইনের মৃত্যুর তিন মাস বাদে।

অগস্টে নিউ ইয়র্কের একটি জেলে উদ্ধার হয় ৬৬ বছরের এপস্টাইনের দেহ। তদন্তে উঠে আসে, বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন আত্মঘাতী হন তিনি। এর পর-পরই ফের এপস্টাইন-অ্যান্ড্রু সম্পর্ক নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। ব্রিটিশ চ্যানেলের নেওয়া সাক্ষাৎকারে এপস্টাইনের সঙ্গে তাঁর মেলামেশার কথা স্বীকার করেন রাজকুমার। রানির অনুমতি নিয়ে বাকিংহাম প্যালেসে বসেই নেওয়া হয় এই সাক্ষাৎকার। যদিও এত কিছুর পরেও ভার্জিনিয়ার ‘কথা’ মনেই করতে পারলেন না তিনি।

ভার্জিনিয়ার দাবি অনুযায়ী, ২০০১ সালে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে নৈশাহার সেরে তাঁরই এক বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটিয়েছিলেন দু’জনে। সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ ওঠায় অ্যান্ড্রু বলেন, ‘‘এই মহিলার সঙ্গে কখনও, কোথাও দেখা হওয়ার কথা মনে করতে পারছি না।’’ তা হলে ‘‘এপস্টাইনের ‘কুকর্মের’ কথা জানার পরেও কেন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন?’’ অ্যান্ড্রু বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য রোজ নিজেকে দোষারোপ করেছি। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে ওই কাজ ঠিক হয়নি। ব্রিটিশ রাজপরিবার যে উচ্চ মান ও আচরণ বজায় রাখে, তার মর্যাদাহানি ঘটিয়েছি।’’ এপস্টাইনের মতো দাগি যৌন হেনস্থাকারীর বাড়িতে থাকার প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন অ্যান্ড্রু। বলেন, ‘‘তখন ওটাই সুবিধাজনক মনে হয়েছিল। পরে বোধোদয় হওয়ার পরে বুঝি, আমি নিঃসন্দেহে ভুল করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prince Andrew Duke of York
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE