Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Hasan Mahmud

তিস্তা-জট কাটবে, আশাবাদী হাছান

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে হাসিনার তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বার্তা দিয়ে রাখলেন হাছান।

Hasan Mahmud

হাছান মামুদ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৩
Share: Save:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন ইনিংসে প্রথম বার ভারতে সফরে এসে বিদেশমন্ত্রী হাছান মামুদ তিস্তা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করার পুরনো অনুরোধটি নতুন করে তুলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে তিস্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাছান বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তিস্তা-সহ অভিন্ন নদীর জলবণ্টন চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও আপত্তি নেই।
কিন্তু একটি রাজ্যের সমস্যা রয়েছে। ভারতে সামনে এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচন। আমরা জানিয়েছি, ভারতে ভোট মিটে গেলে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করব। আমি আশাবাদী, একটি সমাধানে পৌঁছনো যাবে।”

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে হাসিনার তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বার্তা দিয়ে রাখলেন হাছান। তবে এ ব্যাপারে লোকসভা নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে মতামত (তিস্তা চুক্তি করতে না দেওয়া সংক্রান্ত) বদলানোর বিশেষ সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। এই ভোট লোকসভার, ফলে রাজ্য সরকার একই থাকবে, এবং এ ব্যাপারে তাঁর মতামতে মমতা অনড় থাকবেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য মুক্তকণ্ঠে ভারতকে ধন্যবাদ দিয়েছেন হাসিনার বিদেশমন্ত্রী হাছান মামুদ। বলেছেন, “বিএনপি-জামাত জোট এই নির্বাচনে প্রতি পদে বাধা দিয়েছে। তার পরেও আমাদের জয় এসেছে। ফল প্রকাশের পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ফোন করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের পাশে থাকার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”

গত দশ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে, এ কথা উল্লেখ করে হাছান বলেন, “আগে অনেক বিষয় দু’দেশের মানুষ ভাবতেই পারতেন না। রাজনৈতিক ভাবে সেগুলি ধারণা করাই ছিল অসম্ভব। কিন্তু এখন সেগুলি বাস্তব।” যেমন, এক দেশ অন্য দেশের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্যিক পণ্য চলাচল। এটি একটি প্রধান বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিদেশমন্ত্রী। এতদ্সত্ত্বেও বাংলাদেশে একাংশের ‘ভারত-বিরোধী মনোভাব’-এর কথা উল্লেখ করে হাছানের দাবি,বর্তমান সরকারের জমানায় তা ক্রমশ কমছে।

প্রসঙ্গত গত কাল সন্ধ্যায় হায়দরাবাদ হাউসে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি হয়। সেই বৈঠকেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়িত করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই সঙ্গে গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি নবীকরণের বিষয়েও বাংলাদেশ জোর দিয়েছে। বৈঠকের পরে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, তাঁদের আলোচনা দু’দেশের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বৈঠকে উভয় পক্ষ সীমান্ত পাহারায় বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারেও দু’পক্ষ সম্মত হয়েছে। আজ হাছানও তার পুনরুক্তি করেছেন।

একই সঙ্গে ওই বৈঠকে ঢাকা পণ্য রফতানিতে শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকে মায়নমারের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান হাছান। এ মাসেই মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে থাকার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রীর। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ নিয়েও আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে।

বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বৈঠকে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীরা আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নে জোট বাঁধা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন। ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ নিয়েও আলোচনা করেন তাঁরা। শুক্রবার কলকাতা হয়ে ঢাকা ফেরার কথা বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর। তার আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা হাছানের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE