সুইৎজ়ারল্যান্ডের জুরা অঞ্চলের এক দুগ্ধ ব্যবসায়ী বরিস বিউরেট। তাঁর নিজস্ব খামারে ৬০টিরও বেশি গরু রয়েছে। বা বলা যায়, ছিল। কারণ সম্প্রতি বেশ কিছু গরুকে আর না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বরিস। অবশ্য বরিস একা নন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কবাণের মুখে সুইস চিজ় বা চকোলেটের ব্যবসা যে ভাবে ধুঁকতে শুরু করেছে, তাতে একই পথে হাঁটার কথা ভেবে ফেলেছেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের শয়ে শয়ে দুগ্ধ ব্যবসায়ী।
সারা পৃথিবী জুড়েই সুইস চিজ় এবং চকোলেটের সুনাম রয়েছে। মার্কিন গ্রাহকদের কাছেও এর চাহিদা প্রচুর। কিন্তু গত অগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুইৎজ়ারল্যান্ডের উপর ৩৯ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর থেকে সেই চিত্রটা খানিক বদলেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে সুইস দুগ্ধশিল্প। মার্কিন বাজারের ক্রমশ কমতে থাকা চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছেন দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবসায়ীরা।
সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইম্স-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইৎজ়ারল্যান্ডে দুধের জোগানের অভাব নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক গরুও রয়েছে। কিন্তু বরিস জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে এত দুধের আর প্রয়োজন নেই। এত বাড়তি গরু পালনের খরচও বওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে গরুগুলিকে আর না রাখার কথাই ভাবছেন পশুপালকেরা। বরিসের কথায়, ‘‘আমাদের শুল্ক কমানোর জন্য আমেরিকার সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু তাতেও যদি পরিস্থিতি না বদলায়, তা হলে আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই।’’
আরও পড়ুন:
গত মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, সুইৎজ়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। দু’দেশের বাণিজ্য আলোচনাও চলছে। তবে তাতে এখনও বিশেষ আশার আলো দেখছেন না দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা। বরিসের খামারের মতোই সে দেশে প্রায় ২০,০০০টি দুগ্ধ খামার রয়েছে, যেখানে দেশের ৯০ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মের মরসুমে কৃষকেরা প্রায় ৫,৫০,০০০ গরুকে সবুজে ঘেরা আল্পাইন পর্বতমালায় চরাতে নিয়ে যান। কয়েক মাস পরে গরুদের নিয়ে সেখান নেমে আসেন তাঁরা। পরিবেশ, উচ্চমানের ঘাসের জোগান— এ সবের সম্মিলিত প্রভাবে গুণমানের নিরিখে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুগ্ধ উৎপাদন করে গরুগুলি। চলতি বছরে অস্বাভাবিক বেশি বৃষ্টির জেরে প্রচুর ঘাসের জোগান থাকায় প্রচুর দুধ উৎপাদন করেছে গরুগুলি। কিন্তু এত অতিরিক্ত দুধ নিয়ে উল্টে ফাঁপরে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সুইস দুগ্ধ ব্যবসা সংস্থা আইপি লাইট-এর ডিরেক্টর স্টেফান কোহলার বলেন, ‘‘আগে এমনটা হলে কোনও বড় সমস্যা হত না, কারণ, দুগ্ধ শিল্পে সাধারণত অতিরিক্ত সরবরাহকে গুঁড়ো দুধ, চিজ় কিংবা মাখন বানিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু এ বছর ট্রাম্পের চড়া শুল্কের কারণে তা করতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ।’’ ইতিমধ্যেই সংস্থাটি দুধের বার্ষিক উৎপাদন ৫০,০০০ টন কমানোর সুপারিশ করেছে। ফলে প্রায় ২৫,০০০ গরুকে অকালেই জবাই করতে হতে পারে পশুপালকদের। তবে আশঙ্কা, এর জেরে দুগ্ধজাত পণ্যের পাশাপাশি মন্দার মুখে পড়তে পারে মাংস ব্যবসাও। কারণ, আচমকা বাজারে অতিরিক্ত মাংসের সরবরাহ চলে এলে মাংসের দাম পড়ে যেতে পারে।