Advertisement
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Kunming

Menkes Syndrome: দুরারোগ্য ব্যাধি ছেলের, বাড়িতেই ‘ওষুধ’ তৈরি করে ফেললেন বাবা!

কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জু। শিক্ষাগত যোগ্যতা হাইস্কুল পর্যন্তই। হাওইয়াং অসুস্থ হওয়ার আগে অনলাইনে ছোট ব্যবসা চালাতেন জু।

বাবার কোলে ছোট্ট হাওইয়াং।

বাবার কোলে ছোট্ট হাওইয়াং। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে

সংবাদ সংস্থা
কুনমিং শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৫:১৬
Share: Save:

মাত্র দু’টি বসন্ত পেরিয়েছে তার। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সামনের বসন্তটি হয়তো আর দেখা হবে না ছোট্ট হাওইয়াংয়ের। হাতে খুব বেশি হলে আর কয়েক মাস। দুরারোগ্য মেঙ্কস সিনড্রোমে আক্রান্ত এই খুদের প্রাণশক্তি ধরে রাখতে পারে যে ওষুধটি, গোটা দেশেই তা অমিল। আর দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোয় বড় বাধা অতিমারি। এই অবস্থায় ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে মরিয়া হাওইয়াংয়ের বাবা জু ওয়েই বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেছেন গবেষণাগার। নিজেই ওষুধ তৈরি করে খাওয়াচ্ছেন ছেলেকে।

চিনের কুনমিং শহরে বাড়িতেই গবেষণাগার তৈরি করা নিয়ে বছর তিরিশের জু ওয়েই-এর বক্তব্য, ‘‘ভাবার সময় ছিল না। যা করার করতে হত।’’ মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য শরীরে কপার বা তামা জরুরি। তবে হাওইয়াং যে রোগে আক্রান্ত, তাতে এই কপার ঠিক মতো তৈরি করতে পারে না তার শরীর। ফলে তার বছর তিনেকের বেশি বাঁচা কঠিন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জু। শিক্ষাগত যোগ্যতা হাইস্কুল পর্যন্তই। হাওইয়াং অসুস্থ হওয়ার আগে অনলাইনে ছোট ব্যবসা চালাতেন জু। এখন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান এখন একটাই— ‘ছেলেকে লড়াইয়ের সুযোগটা অন্তত দিতে চাই।’ ছেলেকে কোলে নিয়ে মধু মেশানো জল খাওয়াতে খাওয়াতে জু বলেন, ‘‘আমার ছেলে নড়তে বা কথা বলতে পারে না ঠিকই, তবে ওর মধ্যে জীবন আছে, আবেগ আছে।’’

যখন তিনি বাড়িতেই গবেষণাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেউ তাঁর পাশে ছিলেন না। সকলেই বলেছিলেন, ‘এটা অসম্ভব’। এক সময় ভাষা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালেও তা হেরে যায় জুয়ের জেদের কাছে। তিনি জানান, অনলাইনে মেঙ্কস সিন্ড্রোম নিয়ে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল সবই ইংরেজিতে। অনুবাদ সফ্টওয়্যারের সাহায্যে তা পড়তে থাকেন জু। যখন বোঝেন ‘কপার হিস্টিডাইন’ ছেলের অবস্থা পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে, তখন দেরি না করে তাঁর বাবার জিমেই ওষুধটি তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুত করে ফেলেন।

এখন নিয়মিত ছেলেকে বাড়িতে বানানো এই ওষুধটি খাওয়াচ্ছেন জু। তাঁর দাবি, এই চিকিৎসা শুরুর দু’সপ্তাহ পর থেকে খুদের দু’টি রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট ফের স্বাভাবিকে ফিরেছে। এখনও কথা না-বললেও তিনি গায়ে হাত বোলালে নাকি হাসি ফুটে উঠছে হাওইয়াংয়ের ঠোঁটে।

এতদিন অতি-বিরল এই রোগের চিকিৎসায় খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি ওষুধ প্রস্তুতকারীরা। হয়তো কম মুনাফাই এর কারণ, মত জুয়ের। তা বলে ছেলে যে নিজেই ওষুধ তৈরিতে হাত লাগাবে তা ভাবতে পারেননি জুয়ের বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম মজা করছে।’’ টানা ছ’সপ্তাহ গবেষণায় ডুবে থাকার পর ওষুধের প্রথম ভায়ালটি তৈরি করেন জু। প্রথমে খরগোশ এবং তার পরে নিজের শরীরেও ওষুধটি প্রয়োগ করেন। ‘‘খরগোশগুলির কিছু হয়নি, আমারও না, তার পর ছেলেকে ওষুধটি দিই’’, বললেন জু। তবে এই ওষুধ যে রোগটির উপশম নয়, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। জু নিজেও অবশ্য তা স্বীকার করছেন।

তা সত্ত্বেও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ জু। সন্তানের হৃদ্স্পন্দন ধরে রাখার এই যুদ্ধে নিজের অবস্থান মজবুত করতে আগামী দিনে মলিকিউলার বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে দিতে পারি না ওকে। ব্যর্থ হলেও আমি চাই আমার ছেলের মধ্যে আশাটুকু অন্তত বেঁচে থাকুক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kunming Disease Menkes Syndrome Copper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy