Advertisement
E-Paper

পরমাণু অস্ত্রের জন্য কতটা শুদ্ধ করতে হয় ইউরেনিয়াম? কতটা এগিয়েছে ইরান? তেহরানকে নিয়ে ট্রাম্প এত তৎপর কেন?

২০১৫ সালে আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করেছিল। সেখানে ইরানের পরমাণু গবেষণায় নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধিকরণের মাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘাতের দশম দিনের মাথায় ইরানে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধিকরণের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। আমেরিকার দাবি, ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্রে তারা হামলা চালিয়েছে। ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়া হয়েছে ভূগর্ভস্থ পরমাণুকেন্দ্র ফোরডো। যদিও ইরান দাবি করেছে, আমেরিকা হামলা চালালেও তাদের কোনও পরমাণুকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর পাওয়া যায়নি। ফলে কেন্দ্র সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদেই আছেন। কিন্তু আমেরিকার আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরান। অভিযোগ, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়েও আমেরিকা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তেহরান।

কিন্তু ইরানের পরমাণু গবেষণা নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা আমেরিকা বা ইজ়রায়েলের? ইরান তাদের গবেষণায় ঠিক কতটা এগিয়েছে? শীঘ্রই কি তারাও পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়ে যাবে? আমেরিকা-ইজ়রায়েল তেমনটাই দাবি করছে। তাদের বক্তব্য, ইরানের পরমাণু গবেষণা অবিলম্বে থামানো দরকার। তারা যদি পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে, তবে তা শুধু ইজ়রায়েল বা পশ্চিম এশিয়া নয়, সারা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে কোনও দেশের উপরেই যখন তখন ইরান পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে বলে দাবি। ইরান এই সমস্ত দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তারা প্রথম থেকেই জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, জনগণের হিতার্থে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে তাদের গবেষণা চলছে।

পরমাণু অস্ত্রের জন্য কী প্রয়োজন

পরমাণু অস্ত্রের অন্যতম উপাদান ইউরেনিয়াম। ইরানের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রগুলিতে মূলত এই ইউরেনিয়াম পরিশোধনের কাজ চলে। ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমাণু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক ভাবে ইউরেনিয়ামে এই আইসোটোপ থাকে ০.৭ শতাংশ। ইউরেনিয়ামকে বিশুদ্ধ করে করে এর পরিমাণকে ৩ থেকে ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হলে সেই ইউরেনিয়াম বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে পরমাণু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজন ইউরেনিয়ামের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি বিশুদ্ধতা। সেই পর্যায়ে পৌঁছোতে পারলে কোনও দেশ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে। ইরান এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছোয়নি বলেই দাবি সব পক্ষের।

ইরান কতটা এগিয়েছে?

পরমাণু গবেষণা প্রথম থেকেই অত্যন্ত গোপন রেখেছে ইরান। তাদের সবচেয়ে সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্রটি পাহাড়ের নীচে, মাটি থেকে ৩০০ ফুট গভীরে। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত যার অস্তিত্বই জানা ছিল না কারও। ফলে ইরান এই সংক্রান্ত গবেষণায় কতটা এগিয়েছে, এখনও তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে এখন ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ হচ্ছে ইউরেনিয়াম। যা উদ্বেগের। আরও এগোতে পারলে শীঘ্রই পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠবে তারা। তবে গোপনে ইরান তাদের কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশের বিশুদ্ধতার গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলেছে কি না, তা কেউ জানে না। গত শুক্রবার থেকে ইজ়রায়েল ইরানে যে হামলা শুরু করেছে, তার অন্যতম লক্ষ্য ইরানের বিবিধ পরমাণুঘাঁটি। ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছে, ইরানের অনেক পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। তবে এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলি হামলাতেও কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর প্রকাশ্যে আসেনি। ইজ়রায়েল এবং আমেরিকার হামলার পর ইরানের পরমাণু গবেষণা কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্র

ইরানের প্রধান তিনটি পরমাণুকেন্দ্রের মধ্যে একটি রয়েছে পাহাড়ের নীচে, একটি মালভূমিতে এবং একটি মাটির উপরে। সবচেয়ে সুরক্ষিত কেন্দ্র ফোরডো রাজধানী তেহরান থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মাটির ৩০০ ফুট গভীরে অবস্থিত। যাতে বাইরের কোনও শত্রু আক্রমণ করলে এই কেন্দ্রের গায়ে তার আঁচ না লাগে, তাই এই ব্যবস্থা। দীর্ঘ দিন সুপ্ত থাকার পর ২০০৯ সালে পশ্চিমি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই কেন্দ্রের অস্তিত্ব প্রথম টের পায়। তার পর ইরানও সরকারি ভাবে এর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। ফোরডো ঘাঁটি ভূমি থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা বিশেষ ভাবে সুরক্ষিত। অনবরত বোমাবর্ষণেও যাতে এই কেন্দ্রের গায়ে আঁচ না-লাগে, তা নিশ্চিত করতে এখানে রাশিয়ার এস-৩০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা বোমাও ফোরডোর তেমন ক্ষতি করতে পারে না। ইজ়রায়েল থেকে ফোরডো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। এই ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রে আঘাত হানার উপযোগী অস্ত্র কেবল আমেরিকার কাছেই রয়েছে। সূত্রের খবর, আমেরিকা এই কেন্দ্রে বি২ বম্বারের মাধ্যমে বাঙ্কার বাস্টার বোমা ছুড়েছে। এই ধরনের বোমা মাটির নীচে ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত ঢুকে আঘাত হানতে পারে। ফোরডো থেকে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপন্ন হয়। প্রতি মাসে ১৬৬ কেজি করে এই ধরনের ইউরেনিয়াম উৎপন্ন করে ফোরডো। সেই কারণেই এই কেন্দ্রটি ইজ়রায়েল এবং পশ্চিমি শক্তিগুলির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, তেহরান থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ইরানের কেন্দ্রীয় মালভূমিতে রয়েছে নাতান্‌জ় পরমাণুকেন্দ্র। একে ইরানের ‘ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধকরণের মুকুট’ বলা হয়। এই কেন্দ্রেও ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ করা হয়। নাতান্‌জ়ের যে অংশ মাটির উপরে রয়েছে, ইজ়রায়েলের হামলায় সেখানে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি। ইরানের পরমাণু গবেষণার তৃতীয় কেন্দ্রটি রয়েছে তেহরান থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ইসফাহানে। এই কেন্দ্র ১৯৮৪ সালে চিনের সাহায্যে তৈরি করেছিল ইরান। ইসফাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইরানের বৃহত্তম পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র। তিন হাজারের বেশি পরমাণুবিজ্ঞানী এই কেন্দ্রে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এখানে রয়েছে তিনটি চিনা গবেষণা চুল্লি এবং পরীক্ষাগার, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত।

আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি

২০১৫ সালে আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করেছিল। সেখানে ইরানের পরমাণু গবেষণায় নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বলা হয়েছিল, ইউরেনিয়াম ৩.৬৭ শতাংশের বেশি পরিশুদ্ধ করতে পারবে না ইরান। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যেটুকু না হলেই নয়, সেটুকু করা যাবে। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকাকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়। তেহরানের উপর আবার চাপিয়ে দেওয়া হয় একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা। ২০১৯ থেকে পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করতে শুরু করে ইরান। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ২০২.৮ কেজি বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ করতে পারত। আইএইএ-র রিপোর্ট বলছে, মে মাস পর্যন্ত ইরান সংরক্ষণ করে ফেলেছে ৯.২ টন পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম।

Iran Israel war Iran israel Nuclear bomb Nuclear deal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।