ভারতের সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত বাড়াচ্ছে সক্ষমতা। —ফাইল চিত্র।
ষষ্ঠ স্থানে ছিল ভারত। এক লাফে উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে। রাশিয়াকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। সৌদি আরবের মতো ধনকুবের রাষ্ট্রও ভারতের পিছনে পড়ে গিয়েছে।
প্রতিরক্ষা বা সামরিক খাতে কোন দেশের বরাদ্দ কত? ২০১৬ সালের হিসেব প্রকাশ করেছে প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সমীক্ষক সংস্থা আইএইচএস জেন’স। গোটা বিশ্বের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে সে হিসেব। প্রতিরক্ষা খাতে ভারত বিপুল খরচ করছে দেখে বিশ্বের কপালে ভাঁজ পড়েছে, তা কিন্তু নয়। আসলে গোটা পৃথিবীর সামরিক ব্যয় লাফিয়ে বেড়েছে গত দু’এক বছরে। যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রস্তুতি, অস্ত্রাগার বাড়িয়ে তোলা আর বিধ্বংসী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের এই বিপুল উৎসাহ দেখেই উদ্বেগ বাড়ছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট গোটা পৃথিবীর প্রতিরক্ষা বাজেটের ৪০ শতাংশ।
প্রতিরক্ষা খাতে খরচের প্রশ্নে আমেরিকা সবচেয়ে এগিয়ে এখনও। ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি অর্থ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করেছে আমেরিকা। ১৯ হাজার ১৭৫ কোটি ডলার সামরিক খাতে বরাদ্দ করে দ্বিতীয় স্থানে চিন। তৃতীয় ব্রিটেন— যুদ্ধ-বিগ্রহ বা প্রতিরক্ষার জন্য গত এক বছরে ব্রিটেনের বরাদ্দ ছিল ৫৩৮০ কোটি ডলারের বেশি। আর প্রায় ৫০৭০ কোটি ডলার বরাদ্দ করে চতুর্থ স্থানে ভারত।
সমীক্ষকরা বলছেন, সামরিক খাতে বিভিন্ন দেশ যে ভাবে খরচ বিপুল বাড়িয়ে দিয়েছে, তা থেকেই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ছবিটা স্পষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীকরণ এবং আঞ্চলিক বিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি এশিয়ায়। তাই এই মহাদেশেই গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ। তবে অন্যান্য অঞ্চলও খুব পিছিয়ে নেই। সে ছবি দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
এশিয়া
২০১৬ সালে সামরিক খাতে খরচ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এশিয়ায়। চিন এবং ভারত অবশ্যই তালিকায় অগ্রগণ্য। ২০১০ সাল নাগাদ চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। গত ছ’বছরে তা বাড়তে বাড়তে ইতিমধ্যেই ২০ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ ২৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে চিনের সামরিক ব্যয়, বলছেন সমীক্ষকরা।
প্রতিরক্ষা বরাদ্দের প্রশ্নে চিন বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে।
ভারতের সামরিক ব্যয় ২০১০ সাল নাগাদ ছিল ২২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। গত ছ’বছরে তা বাড়তে বাড়তে ৫১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট। আইএইচএস জেন’স বলছে, পাউন্ডের দাম যে ভাবে কমছে, তাতে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের সামরিক ব্যয় ব্রিটেনের চেয়েও বেশি হয়ে যাবে। সামরিক খাতে ব্যয়ের নিরিখে ভারত তখন তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে।
প্রতিরক্ষা বরাদ্দের নিরিখে ভারতের ঠিক পিছনেই আর এক এশীয় দেশ— সৌদি আরব। তাদের বরাদ্দ ৪৯০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: ‘এক চিনে’ আপত্তি! পাল্টা চাপ ট্রাম্পকে
আন্তর্জাতিক তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে জাপান। প্রতিরক্ষা খাতে জাপান ২০১৬ সালে খরচ করেছে প্রায় ৪২০০ কোটি ডলার। দশম স্থানেও এক এশীয় দেশ— দক্ষিণ কোরিয়া। চলতি বছরে তারা খরচ করেছে ৩৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
ইউরোপ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ প্রতিরক্ষা বরাদ্দ প্রায় ২২ হাজার কোটি ডলারের মতো। যদিও ইউরোপের সবক’টি দেশ এই হিসেবের অন্তর্ভুক্ত। ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিরক্ষা বরাদ্দ যোগ করলেই ১৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি হয়। অর্থাৎ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলির বরাদ্দ নগণ্যই। সবচেয়ে পিছিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলি।
সামরিক সক্ষমতার নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার থেকেও ভারতের সামরিক বরাদ্দ এখন বেশি।
আমেরিকা
৬২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিরাট সামরিক বরাদ্দ নিয়ে আমেরিকা স্বাভাবিক ভাবেই সবার চেয়ে এগিয়ে। গোটা বিশ্বের যা প্রতিরক্ষা বরাদ্দ, তার ৪০ শতাংশই আমেরিকার। নিজেদের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ১.১ শতাংশ কমাতে পারে আমেরিকা, শোনা যাচ্ছিল পেন্টাগন সূত্রে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করার পর আমেরিকা আদৌ প্রতিরক্ষা ব্যয় কমাবে কি না, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের সংশয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy