Advertisement
E-Paper

ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সেরে নিল ভারত! লন্ডন থেকে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করলেন মোদী এবং স্টারমার

এই চুক্তিকে ভারত এবং ব্রিটেনের যৌথ বিকাশের নীলনকশা বলে ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এটির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩,৪০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪২
(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ঘোষণা হতে পারে, সেই আভাস আগে থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। হলও তা-ই। ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করল ভারত। বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার।

বছরে ৩,৪০০ কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের চুক্তি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। ব্রিটেন ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর এটিই কোনও দেশের সঙ্গে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক চুক্তি। বৃহস্পতিবার লন্ডনে মোদী এবং স্টারমারের মধ্যে বৈঠকের পরেই এই ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরে গত ৬ মে ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শেষ হয়। এ বার মোদীর ব্রিটেন সফরকালে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হল।

দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে ব্রিটেনের বাজারে ভারতের বেশ কিছু কৃষিজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য কোনও শুল্ক লাগবে না। নতুন চুক্তি অনুসারে, হলুদ, গোলমরিচ, এলাচের মতো কৃষিপণ্য এবং আমের শাঁস, আচার, ডালের মতো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যগুলি ব্রিটিশ বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে। পাশাপাশি ভারতীয় মৎস্যজীবীরাও উপকৃত হবেন। ভারতের চিংড়ি, টুনা মাছ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য বিনা শুল্কে ব্রিটেনের বাজারে আমদানি করা যাবে।

এই চুক্তির ফলে ভারত থেকে রফতানি হওয়া প্রায় ৯৯ শতাংশ পণ্যই ব্রিটেনের বাজারে বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারবে। অন্য দিকে ব্রিটেন থেকে ভারতে রফতানি করা বিভিন্ন পণ্যের উপর দফায় দফায় শুল্ক কমিয়ে আনা হবে। এতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ব্রিটেনের খাদ্য এবং পানীয় প্রস্তুতকারী ক্ষেত্র। এর মধ্যে রয়েছে রয়েছে ব্রিটেনের স্কচ হুইস্কি। বর্তমানে ব্রিটেনের স্কচ হুইস্কির উপর ভারতীয় বাজারে ১৫০ শতাংশ হারে শুল্ক নেওয়া হয়। নতুন চুক্তিতে এই শুল্ক প্রথম ধাপে কমিয়ে ৭৫ শতাংশ করা হবে। তার পরে এক দশকের মধ্যে শুল্ক আরও কমিয়ে ৪০ শতাংশ করে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া এই চুক্তির আওতায়, ব্রিটেন থেকে আমদানি করা পণ্যগুলির প্রায় ৯০ শতাংশের উপর থেকেই শুল্ক কমিয়ে দেবে ভারত। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশ পণ্যে তাৎক্ষণিক ভাবে শুল্কে ছাড় দেওয়া হবে। ব্রিটেন থেকে আমদানি করা স্কচ হুইস্কির এবং জিনের পাশাপাশি জাগুয়ার, ল্যান্ডরোভারের মতো গাড়ি, মেডিক্যাল যন্ত্র, প্রসাধনী, চকোলেট, নরম পানীয়ও সস্তা হবে। ব্রিটেন থেকে আমদানি করা বৈদ্যুতিন গাড়ির উপর বর্তমানে ১১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। সেটি কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে নতুন চুক্তিতে। ফলে বৈদ্যুতিন গাড়ির দামও কমতে পারে ভারতে।

২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। তবে স্থানীয়দের স্বার্থের কথা ভেবে আপেল, চিজ়, দুগ্ধজাত পণ্য চুক্তির আওতায় আনেনি ভারত। এগুলি আমদানির ক্ষেত্রে কর ছাড় থাকছে না।

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে স্টারমারের পাশে দাঁড়িয়ে মোদীও এই চুক্তিকে ভারত এবং ব্রিটেনের যৌথ বিকাশের নীলনকশা বলে ব্যাখ্যা করেন। এই চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩,৪০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, “আজ আমাদের (ভারত এবং ব্রিটেনের) সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক দিন। বেশ কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, আজ দুই দেশ একটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।”

মোদী জানান, ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে ব্রিটেনের বাজারে ভারতীয় বস্ত্র, জুতো, মূল্যবান রত্ন, গহনা, সামুদ্রিক খাবার এবং প্রযুক্তিগত পণ্য আরও বেশি করে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ভারতের কৃষিজাত পণ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ব্রিটেনের বাজার আরও প্রশস্ত হবে বলে মনে করছেন তিনি। এই চুক্তির ফলে ভারতের তরুণ প্রজন্ম, কৃষক, মৎস্যজীবী এবং ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতেরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন বলেও মত মোদীর।

বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সমঝোতাকে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি বলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন স্টারমার। তিনি লেখেন, “ভারতের সঙ্গে একটি যুগান্তকারী চুক্তি হল। এর ফলে ব্রিটেনে চাকরি, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন হবে। এই চুক্তির ফলে হাজার হাজার ব্রিটিশ কর্মসংস্থান তৈরি হবে, ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং খেটে খাওয়া মানুষের পকেটে অর্থ জোগাবে।”

এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হলেও, তা কার্যকর হতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। এটিতে অনুমোদন দিতে হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে। সেই সঙ্গে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ছাড়পত্রও লাগবে। তবেই চুক্তি কার্যকর হবে। মনে করা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সই হওয়ার পর থেকে তা কার্যকর হতে এক বছর সময় লাগবে।

Narendra Modi India UK Free Trade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy