Advertisement
E-Paper

সংখ্যালঘু-নিরাপত্তা নিয়ে আবার ঢাকাকে চাপ দিল্লির! দীপুহত্যায় আরও ৬ জনকে ধরল বাংলাদেশ পুলিশ

ময়মনসিংহের বাসিন্দা দীপু দাসের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল শুরু হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসগুলির বাইরে আছড়ে পড়ছে বিক্ষোভ, যা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে চাপানউতর চলছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৬
উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে। — ফাইল চিত্র।

যুবনেতা ওসমান হাদি খুনের ঘটনার পর থেকেই উত্তাল বাংলাদেশে। দিকে দিকে ছড়াচ্ছে অশান্তির ঘটনা। হাদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চ। হাদির খুনে অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশে পর পর গণপিটুনিতে খুন হন দীপু দাস এবং অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট! সেই দুই খুনের আঁচ সীমান্ত পেরিয়ে এসে পড়েছে ভারতেও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথা তুলে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। একই সঙ্গে গণপিটুনিতে দুই যুবক খুনের ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশও করেছে ভারত।

ময়মনসিংহের বাসিন্দা দীপু দাসের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল শুরু হয়েছে ভারতে। প্রায় প্রতিদিনই দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-কর্মসূচি হচ্ছে। বাংলাদেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসগুলির বাইরে আছড়ে পড়ছে বিক্ষোভ, যা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে চাপানউতর চলছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত সরকার। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেও দীপু দাসের হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে। দোষীদের রেয়াত না-করার বার্তাও দিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধরপাকড়ও চলছে বাংলাদেশে।

ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া

অশান্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছে মোদী সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের হাতে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ-সহ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবিরাম হামলা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’’ ‘‘আমরা সকলেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত। আমরা বিষয়টি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী ছিল, কী হওয়া উচিত এবং কী হবে, সে বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে অবহিত করছি।’’ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জও। দীপু দাসের হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে নয়াদিল্লি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিল। বুধবার গভীর রাতে ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ি জেলায় পিটিয়ে মারা হয় স্থানীয় যুবক অমৃতকে। সেই ঘটনার আবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ভারত।

দীপু-হত্যায় বাড়ল গ্রেফতারি

গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় দীপুচন্দ্র দাস নিহত হন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁকে পিটিয়ে মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছিল উন্মত্ত জনতা। সেই ঘটনায় আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করল বাংলাদেশের পুলিশ। ঘটনার দিন রাতে তাঁরাই দীপুকে জোর করে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছয় যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ওই ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮। পাশাপাশি, দীপুকে পিটিয়ে খুনের সময় আরও যাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে। এলাকার বিভিন্ন ভিডিয়ো দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে অভিযুক্তদের।

হাদি-হত্যার প্রতিবাদ বাংলাদেশে

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। তাঁকে সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ছ’দিন টানা লড়াইয়ের পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়। হাদি বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সকলকে গ্রেফতার না-করা পর্যন্ত ঢাকার রাজপথ না-ছাড়ার ডাক দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। তাদের হুঁশিয়ারি, প্রয়োজনে ইউনূসের বাসভবন ‘যমুনা’ ঘেরাও করাও হতে পারে।

শুভেন্দুর দাবি

দীপু দাস হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার আবার কলকাতার উপদূতাবাসে যান পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাধুসন্তদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে অবিলম্বে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান তিনি। উপদূতাবাস থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু জানান, দীপু দাস খুনের ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ না-করা হলে গঙ্গাসাগর ফেরত সাধুসন্তদের নিয়ে ধর্নায় বসা হবে কলকাতার বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে। সে দিন পুলিশের কোনও বাধা মানা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু।

বিক্ষোভকারীদের জামিন

গত মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এভিবিপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে বাংলাদেশের উপদূতাবাস অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস চত্বর। ওই অশান্তির ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আগে তাঁদের মধ্যে সাত জন মহিলাকে জামিন দিয়েছিল আদালত। শুক্রবার বাকি ১২ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

‘বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষেধ’

বাংলাদেশি অতিথিরা থাকতে পারবেন না পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলার হোটেলে। ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং সে দেশে স‌ংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরবঙ্গের তিন জেলার হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলে হোটেলে ওই মর্মে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দিচ্ছেন তাঁরা। হোটেলমালিকদের কারও কারও দাবি, যেখানে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে সে দেশের কাউকে হোটেলে থাকতে দিলে সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা। বড় অংশের হোটেলমালিকেরা বলছেন, প্রতিবাদ জানাতেই এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

Bangladesh Unrest Bangladesh Situation Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy