উদ্দেশ্য এক। দেশ, মাতৃভূমির জন্য লড়াই। দায়িত্ব-কর্তব্য, এমনকি, পদমর্যাদাও এক। কিন্তু পরিণতি ভিন্ন। একজন বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। অন্য জন দেশের জন্য প্রাণ দিলেও সেই বীরত্ব কার্যত দেখানোর উপায় নেই। প্রথম জন ভারতীয় বায়ু সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। অন্য জন শাহজাজ উদ্দিনও উইং কমান্ডার, তবে পাক বায়ু সেনার। যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পর পাক সেনার হাতে ‘বন্দি’ হয়েও ঘরে ফিরেছেন অভিনন্দন। কিন্তু একই ভাবে নিজের দেশ পাকিস্তানে যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পর নিরাপদে অবতরণ করেও প্রাণ বাঁচাতে পারলেন না শাহজাজ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গণপিটুনিতেই শাহজাজের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের। অভিনন্দনের পরিবার যেখানে খুশির জোয়ারে ভাসছে, শাহজাজের পরিবারে তখন শুধুই অন্ধকার হাহাকার।
ঘটনা কী ঘটেছিল? গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকি বায়ু সেনার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিরোধে নামে ভারতীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমানেই ছিলেন অভিনন্দন। পাকিস্তানের পক্ষে একটি এফ-১৬ বিমানে ছিলেন শাহজাজ। কার্যত ধাওয়া করে ওই পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করেন অভিনন্দন। কিন্তু পাক সেনার গোলায় তাঁর বিমানটিও ধ্বংস হয়। ফলে তিনি বিমান থেকে প্যারাশ্যুট নিয়ে নামতে বাধ্য হন এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে নেমে পড়েন। তার পর পাক সেনার হাতে ‘যুদ্ধবন্দি’ হওয়া, কূটনৈতিক চাপে পাকিস্তানের অভিনন্দনকে ফেরতের সিদ্ধান্ত এবং তাঁর দেশে ফেরার বাকি গল্পটা সবার জানা। দেশে ফেরার পর তাঁর দেশনায়কের সম্মান-মর্যাদা পাওয়া, দেশজুড়ে উন্মাদনার কথাও বহুল প্রচারিত।
কিন্তু কী হল শাহজাজের? ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতে, ওই দিন অভিনন্দন শাহজাজের বিমানকে ধ্বংস করার পর একই ভাবে বিমান থেকে বেরিয়ে প্যারাশ্যুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নির্বিঘ্নে নেমেও পড়েছিলেন মাটিতে। এবং সেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরেই। কিন্তু অভিনন্দনের মতো সৌভাগ্য হয়নি শাহজাজের। একাধিক সংবাদ মাধ্যমের খবর, ওই দিন অভিনন্দনের মতোই শাহজাজকেও ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট ভেবেছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনতা। তাঁকেও বেধড়ক মারধর করে তারা। কিল, চড়, লাথির পাশাপাশি পাথর ছুড়ে শাহজাজকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তার পর পাক সেনা তাঁকে উদ্ধার করে সেনা হাসপাতালে ভর্তি করায়।