E-Paper

খুনের মামলার ঢল বাংলাদেশে, উপদেষ্টারা চুপ

হেনস্থার উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া বা গ্রেফতার করে আদালতে তোলার সময়ে মারধর খাওয়ানোর মতো ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে সেখানে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেখ হাসিনার আমলে ধর্মবিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার আইন এবং ডিজিটাল আইনকে ব্যবহার করে সরকার-বিরোধী সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, শিক্ষক, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্থার বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। সরকার-বিরোধীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে জেলে বা পুলিশ হেফাজতে আটকে রাখার জন্য প্রধানত গোয়েন্দা পুলিশ বা নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে দায়ী করা হতো। হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকারে মানবাধিকার ও আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আসিফ নজরুলকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু হেনস্থার উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া বা গ্রেফতার করে আদালতে তোলার সময়ে মারধর খাওয়ানোর মতো ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে সেখানে। সাড়াশব্দ নেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বা আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের।

এ মাসের ১৬ তারিখে অশীতিপর বৃদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংসদ ও মন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেনকে ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর বাড়ি থেকে খুনের মামলায় গ্রেফতারের পরে তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৬৯ ও ৭০-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছাত্র অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকেও পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিউ মার্কেটে একটি খুনের আসামি হিসাবে। আপাতত ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অবমাননামূলক মন্তব্য করার দায়েও একটি মামলা করা হয়েছে। একই মামলায় জড়ানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নাম। শুক্রবার রাতে সিলেটে ভারত সীমান্তের কাছ থেকে জঙ্গলের মধ্য থেকে আটক করা হয়েছে এই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে। তিনি জানিয়েছেন, বৃদ্ধ বয়সে পুলিশি হেনস্থা থেকে বাঁচতে তিনি দালাল ধরে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু দুই দালাল, তাঁকে মারধর করে ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। বিজিবি তাঁকে আটক করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রাক্তন বিদেশ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণিকে গ্রেফতারের পরে যে ভাবে আদালতে তাঁকে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীদের দিয়ে কিল-চড় খাওয়ানো হয়েছে, তাতেও পুলিশের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এর আগে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টা সালমন এফ রহমানকেও ভিড়ের মধ্য দিয়ে আদালতে তোলা হয়। জুতো ও ডিম ছুড়ে মারতে দেওয়া হয় বেক্সিমকো গোষ্ঠীর শিল্পপতি সালমনকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে কত খুনের মামলা করা হয়েছে, তার হিসাব রাখা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। তাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত করা হয়েছে হাছান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের, মহিবুল হাসান, টিপু মুনশি, আসাদুজ্জামান খান কামাল-সহ আগের সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীকে।

খুনের মামলা থেকে বাদ পড়েননি বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস ও ক্রিকেটার শাকিব আল হাসানও। দু’জনকেই এ বার আওয়ামী লীগের টিকিটে জিতিয়ে এনেছিলেন শেখ হাসিনা, আর সেটাই এঁদের ‘অপরাধ’। একই খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ফেরদৌস ও শাকিবকে। শাকিব এখন পাকিস্তানে দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছেন। সেখান থেকে তাঁকে উড়িয়ে এনে গ্রেফতার করার জন্য আইনি নোটিস দিয়েছেন বিএনপির এক আইনজীবী। এর মধ্যেই শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রাক্তন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy