ইরান এবং ইজ়রায়েলের সংঘাত নবম দিনে পড়ল শনিবার। যত দিন যাচ্ছে, সংঘর্ষের ঝাঁজ বাড়ছে। বিরামের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবার ইজ়রায়েলে আক্রমণ বাড়িয়েছে ইরান। পাল্টা তেল আভিভ থেকেও একে একে উড়ে গিয়েছে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। রাতের সংঘর্ষে দুই দেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হামলা চলেছে মুহুর্মুহু।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাত আড়াইটে নাগাদ ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করে। ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয় নাগরিকদের। তার কিছু ক্ষণ পরেই তেল আভিভ, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ মধ্য ইজ়রায়েলের অধিকাংশ এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। আকাশে দেখা যায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে সেগুলিকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি আইডিএফের। শহর এলাকা মধ্যরাতে ঘন ঘন কেঁপে উঠেছে বিস্ফোরণের শব্দে। একই সঙ্গে আবার ইজ়রায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গভীর রাতে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে তেহরানকে লক্ষ্য করে। আইডিএফের দাবি, ইরানের সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্রের সংরক্ষণকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করা হয়েছিল রাতের হামলায়। এ ছাড়া, দক্ষিণ ইজ়রায়েলেও রাতভর সাইরেন বেজেছে। ইরান থেকে ওই অঞ্চলে অন্তত পাঁচটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন:
ইজ়রায়েলের আপৎকালীন পরিষেবা থেকে যে সমস্ত ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মধ্য ইজ়রায়েলের একটি বহুতলে আগুন দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে উল্লেখ করে রয়টার্স জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তার ধ্বংসাবশেষ এসে পড়েছিল ওই বহুতলের উপর। তার ফলেই আগুন ধরে যায়।
গত শুক্রবার ইজ়রায়েল প্রথম হামলা চালায় ইরানে। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয় চার ইরানি শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর। প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়ে এর পর পাল্টা হামলা শুরু করে তেহরানও। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে দু’দিন থেকেই। আমেরিকার মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব বলছে, ন’দিনের সংঘাতে ইরানে অন্তত ৬৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইজ়রায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত সে দেশে ২৪ জনের মৃত্যুর কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছে।
ইজ়রায়েলের হামলায় প্রথম থেকেই সমর্থন ছিল আমেরিকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানোর আগে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু এখনও এই যুদ্ধে সরাসরি আমেরিকা যোগ দেয়নি। শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা অস্ত্র ধরবে কি না, দু’সপ্তাহের মধ্যে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। যদিও নেতানিয়াহু দাবি করেন, তাঁরা ইরানের সমস্ত পরমাণুঘাঁটি ধ্বংস করবেন। তা আমেরিকাকে পাশে নিয়ে হোক বা আমেরিকাকে ছাড়া। ইরানের তরফেও সুর নরম করা হচ্ছে না। ফলে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে।