ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে আমেরিকা যোগ দিলে চুপ থাকবে না তেহরান। পশ্চিম এশিয়াতে যে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে হামলা চালাতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখছে ইরান! গোয়েন্দাদের তথ্য পর্যালোচনা করে এমনই দাবি করছেন মার্কিন প্রশাসনিক কর্তারা।
সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা প্রায় তিন ডজন জ্বালানি ভরার বিমান পাঠিয়েছে ইউরোপে। মূল আমেরিকান ঘাঁটি রক্ষা করতে যে যুদ্ধবিমানগুলি রয়েছে, সেগুলি সহয়তা করার জন্যই জ্বালানি ভরার বিমান পাঠিয়েছে আমেরিকা। তবে অনেকের মতে, ইরানের পরমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে হামলার কথা ভাবতে পারে আমেরিকা। সেই কারণেই আমেরিকার বোমারু বিমানে সহয়তার জন্যও জ্বালানি বিমানগুলি পাঠাতে পারে তারা। সেই জল্পনার মধ্যেই আমেরিকা প্রশাসন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করল।
আরও পড়ুন:
-
আমেরিকা কি সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে? ট্রাম্পের মন্তব্যে শুরু জল্পনা, মার্কিন গোয়েন্দাদের ডেকে হোয়াইট হাউসে বৈঠক
-
বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচে ‘স্বচ্ছতা’ আনতে বিধানসভায় পাশ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিল
-
‘এ সব কথায় গুরুত্বই দিই না’! ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্রসঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবিই নস্যাৎ করে দিলেন ট্রাম্প
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী চান, আমেরিকা এই যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করুক, যাতে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র ফরডোয় বোমা ফেলুক আমেরিকা। কারণ, ওই পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করার জন্য বোমা নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধবিমান নেই ইজ়রায়েলের হাতে। সেই আবহেই ইরানের আশঙ্কা, যে কোনও সময় আমেরিকা তাদের উপর হামলা চালাতে পারে। যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তবে পাল্টা জবাব দেবে ইরানও। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা যদি সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয়, তা হলে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজে হামলা করতে পারে। মার্কিন প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, মার্কিন ঘাঁটিতে ইরাক এবং সিরিয়ার ইরানপন্থী বিদ্রোহীগোষ্ঠীদের হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ আবার এ-ও মনে করছেন, হরমুজ প্রণালীতে ‘মাইনিং’ শুরু করতে পারে ইরান। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জর্ডন এবং সৌদি আরব-সহ পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পশ্চিম এশিয়ায় ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। আরব সাগরীয় দেশগুলিতে যে সব মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, সেগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইরান। সোমবারই ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘটি এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ‘‘আমাদের শত্রুদের জানা উচিত যে, তারা আমাদের উপর সামরিক হামলা চালিয়ে কোনও সমাধানসূত্রে পৌঁছোতে পারবে না। ইরানিদের উপর নিজেদের ইচ্ছাও চাপিয়ে দিতে পারবে না।’’
ইতিমধ্যেই ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রেখেছেন। মঙ্গলবারই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছিলেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, এ-ও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, খামেনেই কোথায় লুকিয়ে আছেন তা জানেন তিনি। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘আমরা জানি যে তথাকথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, কিন্তু সেখানে নিরাপদ। আমরা তাঁকে বার করে (হত্যা!) করব না, আপাতত নয়।’’ অনেকের মতে, ট্রাম্প ইজ়রায়েলের সঙ্গে আমেরিকাকে জুড়েই ‘আমরা’ শব্দটিতে জোর দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, মঙ্গলবারই হোয়াইট হাউসে মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন ট্রাম্প। তবে কি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পরিকল্পনার কথা জানার পরেই সুর চড়িয়েছেন ট্রাম্প?