Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাগদাদি নিধনে বাহিনীর ভরসা এখন গুপ্তচরেরাই

এক দিকে মসুল আর অন্য দিকে আলেপ্পো! পশ্চিম এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে উৎখাত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ইরাক ও সিরিয়ার বাহিনী।

সংবাদ সংস্থা
ইরবিল (ইরাক) শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৪
Share: Save:

এক দিকে মসুল আর অন্য দিকে আলেপ্পো! পশ্চিম এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে উৎখাত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ইরাক ও সিরিয়ার বাহিনী। দু’দেশেই নিশানা হয়েছে জঙ্গিদের দুই শক্ত ঘাঁটি। চলছে অবিরাম লড়াই। তবে এ সবের মধ্যেই বাহিনীর অন্দরমহল থেকে কূটনীতির গোলটেবিলে ঘুরপাক

খাচ্ছে লাখ টাকার প্রশ্নটা— কোথায় আছেন আবু বকর-আল বাগদাদি? আদৌ বেঁচে আছেন কি? নাকি তাঁর নাম সামনে রেখেই চলছে রাজ্যপাট? দফায় দফায় খবর আসে, জখম হয়েছেন আইএস-প্রধান। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যুর খবরও। তবে কোনটা সত্যি, ধন্দ কাটে না গোয়েন্দাদেরও!

সম্প্রতি ইরাক বাহিনীর নেতৃত্বে ‘মসুল অভিযান’ শুরুর পর থেকেই সামনে এসেছে বাগদাদিকে নিয়ে একাধিক জল্পনা। কেউ বলছেন, তিনি মসুলেরই কোনও গোপন সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রয়েছেন। কেউ আবার বলছেন, তিনি দূর থেকেই জমি ধরে রাখার বার্তা দিচ্ছেন! ইরাকি বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র বলছে, নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও যখন জঙ্গিদের অবস্থান পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে না, তাবড় গোয়েন্দারাও যখন ধন্দ কাটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তখন, এক
অভিনব পন্থায় জঙ্গিদের খবর আসছে বাহিনীর কাছে!

কী সেই পন্থা?

ইরাকি বাহিনীর অন্দরমহলের খবর, জঙ্গিদের মধ্যে মিশে থাকা গুপ্তচরেরাই এখন তাকত বাড়াচ্ছে বাহিনীর! জঙ্গিদের মধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাহিনীর চরেদের। যেমন, সপ্তাহ খানেক আগে এক সেনার মোবাইলে বাগদাদির কথা জানিয়ে বার্তা পাঠায় এমনই এক জন। জানায়, ‘বাগদাদি ধৈর্য হারাচ্ছেন। গা ঢাকা দিয়ে থাকছেন সারাক্ষণ। সুড়ঙ্গ ছাড়া যাতায়াতই করছেন না। মানসিক ভাবে তিনি এতই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে আত্মঘাতী জ্যাকেট ছাড়া রাতে ঘুমোতেও পারছেন না।’’

বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, এই চরেদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনার পাশাপাশি রয়েছেন বেশ কিছু গ্রামবাসীও। খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেতে এমন কিছু পরিবারকে নিত্য অর্থও যোগাচ্ছে বাহিনী। তাদের কাছ থেকে মসুলের বর্তমান চিত্র ও আইএস অত্যাচারের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

বাহিনীর দাবি, চরদের কাছ থেকে পাওয়া খবরে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, নিজের লোকেদের উপরেই এখন বিশ্বাস হারাচ্ছেন বাগদাদি। গত অক্টোবরে একটি সিমকার্ড-সহ জঙ্গিদের হাতেই ধরা পড়ে যান এক আইএস কম্যান্ডার। জানা যায়, বাগদাদিকে খুন করার ছক কষছিলেন তিনি। পরে জনসমক্ষে তাঁকে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি এই একই সন্দেহে ৫৮ জঙ্গি ও ৪২ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এখন জঙ্গিদের কারও কাছে সিমকার্ড বা মোবাইল পাওয়া গেলে সময় নষ্ট না করে তক্ষুনি খুন করা হচ্ছে তাকে।

মসুলের অলিগলিতে সরকারি বাহিনীর চর যেমন জঙ্গি-বেশে সমানে কাজ করে চলেছে, তেমনই পাল্টা অস্ত্র শানিয়েছে জঙ্গিরাও! গ্রাম থেকে তুলে এনে বাচ্চা ছেলেদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এখন তাদের চরবৃত্তি করার তালিমও দেওয়া হচ্ছে। মসুলের অলিতে-গলিতে ঘুরছে সেই সব খুদে-খবরি। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করতে করতেই তাদের বাবা-কাকা-দাদাদের খবর বের করে
আনছে তারা।

সম্প্রতি মসুলের শহরতলি থেকে বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ২১ বছরের আলি কাহতান। তার কথায়, ‘‘প্রথমে ছুরি দিয়ে, তার পর একে-৪৭-এর বেয়োনেট দিয়ে গলা কাটতে শেখানো হয়েছিল। এক দিন পাঁচ কুর্দ সেনার গলা কাটার নির্দেশ এল। কেটে ফেললাম। তার পর রক্ত
পরিষ্কার করে বাড়ি ফিরে মা-বাবার সঙ্গে খেতে বসলাম।’’ আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ছক কষতে গিয়ে বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বাকর সালাহ বাকর (২১)। সে জানায়, তুরস্ক সীমান্তে পারাপার বন্ধ হওয়ার পর এখন ইরাকি যুবকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আইএস। ফেসবুকের মাধ্যমে তাকেও দলে ডাকা হয়েছিল বলে দাবি সালাহের।

তবে এই সন্ত্রাস আর বেশি দিন থাকবে না— মসুল অভিযান শুরুর আগেই জাতীয় টেলিভিশনে বার্তা দিয়েছিল ইরাক সরকার। একই লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সিরিয়ার আসাদ-সরকারও। আর মার্কিন
নেতৃত্বাধীন বাহিনী বলছে, মসুল দখল এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! আজ না হোক কাল, এই সন্ত্রাস খতম হবেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iraq
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE