আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা গাজ়া ভূখণ্ডের ‘দখল’ নেবেন। গাজ়াকে নতুন করে তৈরি করবেন। তবে সেখানে প্যালেস্টাইনিদের জায়গা হবে না। তাঁদের চলে যেতে পড়শি কোনও দেশে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে ইজ়রায়েল। তারা বেজায় খুশি। ট্রাম্পকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বন্ধু বলে উল্লেখ করে, প্যালেস্টাইনিদের কার্যত নিজেদের ঘর থেকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাদের সেনাবাহিনীর কাছে সরকারি নির্দেশ চলে এসেছে— ‘গাজ়া ছেড়ে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে প্যালেস্টাইনিদের’।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা শুনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্রনেতারা। বিশ্বের প্রায় সব দেশই কার্যত বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনিদের এ ভাবে গাজ়া থেকে উচ্ছেদ করা হলে, সেটা ‘কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা’ হচ্ছে বলে দেখা হবে। ট্রাম্পের যদিও দাবি, তাঁর পরিকল্পনা ‘সকলের পছন্দ’ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসন অবশ্য পরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে। বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজ়ার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর বিষয়টি সাময়িক ব্যাপার। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজ়ায় আমেরিকার সেনাবাহিনী পাঠানোর কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।
ইজ়রায়েল অবশ্য সব নিন্দামন্দ উপেক্ষা করে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে ঢাল করে উচ্ছেদ-প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ় আজ সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্যালেস্টাইনিদের শান্তিপূর্ণ ভাবে স্বেচ্ছায় গাজ়া-ছাড়ার জন্য উপযোগী একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন প্যালেস্টাইনিরা? কাৎজ়ের কথায়, ‘‘যেখানে ইচ্ছা, সেখানেই ওঁরা যেতে পারেন, যে দেশ ওঁদের নেবে।’’ কাৎজ় জানিয়েছেন, শুধু স্থলপথে সীমান্ত-পার নয়, দরকারে সমুদ্রপথে বা আকাশপথেও তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইজ়রায়েলি বাহিনী প্যালেস্টাইনিদের ‘সাহায্য’ করবে।
একটি আমেরিকান টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধ। এই প্রথম কেউ কাজের কথা বললেন। আমার মনে হয় এটা সত্যিই করা উচিত। আমার বিশ্বাস, এটা সকলের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।’’ তিনি এ-ও বলেছেন, প্যালেস্টাইনিদের চিরকালের জন্য গাজ়া ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। তাঁরা যেতে পারেন, ফিরে আসতে পারেন, অন্যত্র থাকা শুরু করলেও ফিরে আসতে পারেন, কিন্তু গাজ়া পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নেতানিয়াহুর সুরেই কাৎজ় বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের পরিকল্পনা মতো চললে গাজ়াবাসীদেরই ভাল হবে। তাঁরা স্বেচ্ছায় চলে গেলে তাঁদের আশ্রয়দাতা দেশে চলে যেতে সাহায্য করা হবে, গাজ়া পুনর্নির্মাণ করা যাবে, ভয়-মুক্ত গাজ়া তৈরি হবে।’’
কার ভয়? কোন ভয়ের কথা বলছেন কাৎজ়? এর উত্তর নেই। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই বিচ্ছিন্ন মৃত্যুর খবর মিলছে গাজ়া থেকে। যেমন, নুসেরাত শিবিরে আজ এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। রোগে ভুগে মৃত্যুও বাড়ছে। দিনের পর দিন ত্রিপল খাটানো অস্থায়ী আস্তানায় না আছে পানীয় জল, না নিকাশি ব্যবস্থা। ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই না খেতে পেয়ে, রোগে ভুগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। অসুখ করলে ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই। হাসপাতালগুলি ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যে অভিযোগ, ত্রাণের ট্রাক গাজ়ায় ঢুকছে ঠিকই, কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় বহু জিনিস ঢুকতে দিচ্ছে না ইজ়রায়েল। এ-ও কি যুদ্ধ-কৌশল? চুপ কাৎজ়। ট্রাম্প বলছেন, গাজ়া আসলে প্যালেস্টাইনিদের জন্য ‘পয়া’ নয়। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)