গাজ়া দখল নয়, ইজ়রায়েলের মন্ত্রিসভা ওই ভূখণ্ড দখলের অনুমোদন দেওয়ার পর সুর বদল করলেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু! গাজ়া নিয়ে তাঁর নতুন পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তবে প্রশ্ন, হঠাৎ কেন গাজ়া নিয়ে সুর পাল্টালেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ, না কি নেপথ্যে অন্য কারণ, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
গাজ়া ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের দিকে যে তাঁরা এগোচ্ছেন, তার ইঙ্গিত গত কয়েক দিন ধরেই দিচ্ছিলেন নেতানিয়াহু। ১০ ঘণ্টা টানা বৈঠকে তাঁর প্রস্তাবেই অনুমোদন দেয় ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা এবং রাজনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা। সামরিক অভিযান শুরুর কথা বলা হয়। তার জন্য সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ প্যালেস্টাইনিকে উত্তর গাজ়া ভূখণ্ডের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। তবে শনিবার এক্স পোস্টে গাজ়া দখলের দাবি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন নেতানিয়াহু।
এক্স পোস্টে ইজ়রায়েল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘আমরা গাজ়া দখল করব না।’’ তার পরিবর্তে নতুন কী পরিকল্পনা করেছেন, তারও আভাস দেন নেতানিয়াহু। তিনি জানান, গাজ়াকে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাত থেকে মুক্ত করাই লক্ষ্য! নেতানিয়াহু চান, গাজ়ায় বেসামরিক শান্তিপূর্ণ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। সেই প্রশাসন হবে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষ এবং হামাস মুক্ত। কেন তিনি এই পরিকল্পনা করেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তাঁর দাবি, এই ব্যবস্থা পণবন্দিদের মুক্ত করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে গাজ়া যাতে আর ইজ়রায়েলের কাছে হুমকির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত হবে।
নেতানিয়াহুর গাজ়া দখলের ইচ্ছা অনেক দিনের। অতীতে বার বার প্রকাশ্যেই তিনি তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইজ়রায়েলের মন্ত্রিসভা সেই প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়। নেতানিয়াহু জানান, ইজ়রায়েল গাজ়ার পুরো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। গাজ়া দখল করে তা হামাস বিরোধী আরব বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন:
প্যালেস্টাইনিদের বাসভূমি গাজ়া ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশ জমি ২২ মাসের সামরিক অভিযানে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েল। গত মাসে এমনই জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। বাকি অংশ দখলের পথেই এগোচ্ছে ইজ়রায়েল। উল্লেখ্য, পণবন্দি মুক্তি নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে মার্চের গোড়ায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইজ়রায়েলি ফৌজ গাজ়ায় হামাস বিরোধী অভিযান শুরু করেছিল। পরে হামাস ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের ফেরাতে রাজি হলেও ইজ়রায়েলের আক্রমণ থামেনি। মার্চ মাস থেকে গাজ়া অবরোধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলি সেনা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহকারী ট্রাক। তার জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি গাজ়াবাসী। হাজার হাজার শিশু অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি। অনাহারে মৃতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। গাজ়া অবরোধের সিদ্ধান্তে নিন্দার মুখে পড়তে হয় ইজ়রায়েলি প্রশাসনকে। সমালোচনার মুখে পড়ে গাজ়ায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, গাজ়ায় যে পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে, তা যথেষ্ট নয়।