E-Paper

সবই ষড়যন্ত্র! রাষ্ট্রদূতের তত্ত্বে নিশানা রাষ্ট্রপুঞ্জও

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল থেকে ২৫১ জন নিরপরাধ মানুষকে অপহরণ করে পণবন্দি করেছিল হামাস। ২০৫ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।

মহুয়া গিরি

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ০৮:১১
রুভেন আজ়ার।

রুভেন আজ়ার। —ফাইল চিত্র।

খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ যখন ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে গাজ়ায় দুর্ভিক্ষ তৈরি করার অভিযোগ এনেছে, তখন ভারতে নিযুক্ত ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজ়ারের দাবি, ‘‘এ সব ষড়যন্ত্র। জঙ্গি সংগঠন হামাস আর তাদের মদতদাতা কিছু রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী দল ভুয়ো তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ এমনকি, সোমবার কলকাতায় আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনও হামাসকে মদত দিচ্ছে!

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল থেকে ২৫১ জন নিরপরাধ মানুষকে অপহরণ করে পণবন্দি করেছিল হামাস। ২০৫ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। রুভেন বললেন, ‘‘বাকিদের ফিরিয়ে আনতে সামরিক কৌশল এবং সমঝোতা— দু’ভাবেই চেষ্টা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। শুধু পণবন্দিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা নয়, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সেই যুদ্ধের পদ্ধতি নিয়ে। যে ভাবে ইহুদিদের উপরে বীভৎস অত্যাচার চালিয়ে নাৎসিরা তাদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, গাজ়ায় পরিকল্পিত হত্যালীলা তার থেকে আলাদা কোথায়? রাষ্ট্রদূতের দাবি, দুটো পুরোপুরি আলাদা বিষয়। প্রথমটা বিনা প্ররোচনায় শুধুমাত্র ইহুদি বিদ্বেষ থেকে ঘটানো হয়েছিল। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। যদিও ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছিলেন, সম্পূর্ণ গাজ়া ভূখণ্ড দখল করতে চান তিনি। এ কি গাজ়া দখলের প্রথম ধাপ? রুভেন বললেন, ‘‘গাজ়া অধিকারের কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। ২০০৭ সাল থেকে গাজ়ায় শাসন করছে হামাস। নাক গলাইনি। গাজ়ার বাসিন্দাদের আমাদের দেশে কাজের অনুমতি দিয়েছি। গাজ়ায় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করেছি। হামাসই উল্টে বার বার হামলা চালিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, হামাসকে নিষ্ক্রিয় করার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গাজ়ার প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তাঁরাই গাজ়া শাসন করবেন।’’

অথচ নেতানিয়াহু কয়েক দিন আগেই বলেছেন, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, পূর্ব জেরুসালেম, গোলান হাইটস, আরব দুনিয়ার একাংশ দখল করে বৃহত্তর ইজ়রায়েল গড়ে তুলতে চান তিনি। এতে তো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হবে। রুভেনের জবাব, ‘‘কোনও আন্তর্জাতিক আইন ইহুদিদের অধিকার অস্বীকার করতে পারে না। এই সমস্ত মাটিতে ইহুদিদের জন্মগত অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার ফেরত চাইছি। এর বাইরে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডন দখল করার ইচ্ছে আমাদের নেই।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদিত খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংগঠন আইপিসি গাজ়ায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। এর আগে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন, গাজ়ার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষোভের সুরে রুভেনের জবাব, ‘‘এই রিপোর্ট পুরোপুরি ভুয়ো। ওরা সত্যকে বিকৃত করছে। দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে দুর্ভিক্ষের মাপকাঠিই বদলে দিয়েছে আইপিসি। আসল সত্যি হল, ইজ়রায়েল গাজ়ায় ইতিমধ্যে ২০ লক্ষ টন খাবার সরবরাহ করেছে। জিএইচএফ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেই সমস্ত ত্রাণ বিলি করছে। আইপিসি যে সময়ে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করল, সেই সময়ে গড়ে প্রতিদিন ৩৫০টি ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজ়ায় ঢুকেছে। কিন্তু হামাস গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে ত্রাণ লুট করে কালোবাজারে বিক্রি করছে।’’ মার্চের পর থেকে টানা ১১ সপ্তাহ গাজ়ায় কেন ত্রাণ ঢুকতে দেয়নি ইজ়রায়েল? একটু থেমে রুভেনের দাবি, দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষবিরতির পরে ওই পরিস্থিতি হয়। তার পরেই ইজ়রায়েল ২২ হাজার ত্রাণের ট্রাক ঢোকার অনুমতি দিয়েছে।

গাজ়ায় দুর্ভিক্ষ তৈরি ও গণহত্যার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও হত্যা করছে ইজ়রায়েল। রুভেনের বক্তব্য, নিহতেরা নাকি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা হামাস জঙ্গি। সাংবাদিক হত্যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গাজ়ায় গণহত্যার অভিযোগ তুলে তীব্র নিন্দা করেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। রুভেন জবাবে বলেছিলেন, গাজ়ায় ২৫ হাজার হামাস জঙ্গিকে হত্যা করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। অথচ রাষ্ট্রপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হিসাব দিয়েছে, গাজ়ায় নিহতদের মধ্যে ১৮,৫০০ জনই শিশু ও কিশোর। যাদের মধ্যে অন্তত হাজার জনের বয়স এক বছরের কম। এরাও কি হামাস জঙ্গি? রুভেনের কথায়, যুদ্ধের ‘পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি’ হিসেবে কিছু সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। তবে এই সংখ্যাগুলির মধ্যে ‘ভেজাল’ মেশানো রয়েছে, তাঁর দাবি। তাঁর বক্তব্য, হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই হতাহতের খতিয়ান প্রকাশ করে ও হামাস এতটাই ইহুদি বিদ্বেষী যে সন্তানদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেও দ্বিধা বোধ করে না তারা।

গাজ়ার হাসপাতালে ইজ়রায়েলের পর পর দু’বার হামলার খবর আমার মোবাইলে তখনই এল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Israel Army gaza

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy